সাইফুল আজম ১৯৪১ সালে পাবনা জেলার
খগড়বাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চ মাধ্যমিক
স্তরের পর ১৯৫৬ সালে তিনি পশ্চিম পাকিস্তান
যান। ১৯৬০ সালে তিনি জিডি পাইলট ব্রাঞ্চের
একজন পাইলট হন।
জুন ৬ , ১৯৬৭। আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ চলছে। তৎকালীন
পাকিস্তান এয়ারফোর্স থেকে ডেপুটেশনে আসা
গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজম পশ্চিম ইরাকের এক
বিমান ঘাটিতে অবস্থান করছে। অনেকটা
ভোজবাজির মতোই আকাশে চারটা ইজ্রায়েলি
বিমানের ( যাদের কে এস্কোর্ট করছিলো দুইটা
ইস্রায়েলি মিরেজ ফাইটার ) উদয় হয়। আকস্মিক
আক্রমণে ইরাকি এয়ারফোর্স বিপর্জস্ত ।
ইসারায়েলি ক্যাপ্টেন ড্রোর একের পর এক ইরাকি
বিমানের ভবলীলা সাংগ করে চলেছে। তার সাথে
সঙ্গী হিসাবে আছে আরেক ইজ্রায়েলি ক্যাপ্টেন
গোলান। এই অবস্থায় আকাশে উড়াল দেয় সাইফুল
আজম। উড়াল দেবার কিছুক্ষণের মাঝেই তার
উইংম্যান কেও ফেলে দেয় ইজ্রায়েলি ক্যাপ্টেন
ড্রোর। কিন্তু সাইফুল আজম অন্য ধাতুতে গড়া। একে
একে গোলান, ড্রোর সবার প্লেন ফেলে দেয় সে।
মোটামুটি একা লড়াই করে ইজ্রায়েলি বিমান
গুলোকে ইরাকের আকাশ ছাড়তে বাধ্য করে সে।
ক্যাপ্টেন ড্রোর এবং গোলান কে পরে যুদ্ধবন্দী
হিসাবে আটক রাখা হয়।
এখন পর্যন্ত আধুনিক যুদ্ধের ইতিহাসে ইসরায়েলের
সর্বোচ্চ সংখ্যক বিমান ঘায়েল করার রেকর্ড
ক্যাপ্টেন সাইফুল আজমের।
এছাড়া প্রথম বিশবযুদ্ধ থেকে শুরু করে এপর্যন্ত
সর্বোচ্চ সংখ্যক শত্রুপক্ষের বিমান ঘায়েল করার
রেকর্ড এর তালিকায় ও তিনি উপরের দিকে আছেন।
আরব-ইস্রায়েল যুদ্ধে অসাধারণ অবদান রাখার
স্বীকৃতি স্বরূপ জর্দান-ইরাক-পাকিস্তান তাকে
বীরত্ব সূচক পদকে ভূষিত করে। তিনটি দেশের
সম্মান সূচক সামরিক পদক অর্জনের ঘটনা সামরিক
ইতিহাসে বিরল। একই সাথে তিনটি দেশের হয়ে
যুদ্ধ করা এবং একই ব্যাক্তির দ্বারা একের অধিক
শ্ত্রু রাষ্ট্রের (ভারত এবং ইসরায়েল) বিমান
ভূপাতিত করার বিরল রেকর্ডের অধিকারীও এই একই
ব্যাক্তি।
১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তাকে সাময়িক
ভাবে সারাগোধাতে অবস্থিত ১৭
স্কোয়াড্রন এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফ্লাইট
লেফটেন্যান্ট সাইফুল আযম এ সময় এফ-৮৬ স্যাবর
জেট বিমান এর পাইলট হিসেবে প্রধানত পদাতিক
সহায়ক মিশন পরিচালনা করতেন। ১৯৬৫ সালের ১৯ এ সেপ্টেম্বর বিখ্যাত চাবিন্দা ট্যাংক যুদ্ধে অংশ
নেন তিনি এবং বিমান থেকে রকেট ও গোলা বর্ষন
করে একাধিক ভারতিয় ট্যাংককে ধ্বংস ও অকার্যকর
করেন। এসময় চারটি ভারতিয় ”Gnat”জঙ্গি বিমান
তাদের উপর আক্রমন করে। সাধারন ভাবে বিমান
থেকে ভুমিতে যুদ্ধের উপযোগি অস্ত্র সজ্জিত
থাকায় এসময় পাকিস্তানি বিমানগুলির পালিয়ে
যাওয়াই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ফ্লাইট
লেফটেনান্ট সাইফুল আযম রুখে দাড়ান এবং বিমান
যুদ্ধ বা ডগ ফাইটে একটি ভারতিয় ”Gnat” জঙ্গি
বিমান ভুপাতিত করেন। এই কৃতিত্বের জন্য তাকে
পাকিস্তানে ”সিতারা-ইজুরায়ত” (বাংলাদেশের
বীরবিক্রম এর সমতুল্য, পাকিস্তানের তৃতীয়
সামরিক বীরত্বের খেতাব) পদকে ভুষিত করা হয়।
১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ
চলাকালীন সময়ে তিনি চারটি F-86 Sabre এর
ফরমেশনে অংশ নিয়ে ভারতের ভূমীতে আক্রমণের
উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করেন। হঠাৎ দুইটি ভারতীয়
Folland Gnat (Folland Gnat, F-86 এর চেয়ে Superior) তাদের পথ রোধ করে। ঘটনার জেরে সৃষ্ট ডগফাইটে সাইফুল আজম একটি Folland Gnat গোলাবর্ষণ করে ভূপাতিত করেন (পাইলট,ফ্লাইং
অফিসার ভি মায়াদেব নিরাপদে Ejectকরে
বেরিয়ে আসলে তাকে যুদ্ধবন্দি করা হয়). অন্য
Folland Gnat টি রনেভঙ্গ দিয়েছে বুঝতে পারার
পর সেটিকে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়।
১৯৬৬ সালের নভেম্বর মাসে তৎকালীন ফ্লাইট
লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম এবং অপর আরেক জন
পাকিস্তানী বিমান বাহিনীর অফিসার ফ্লাইট
লেফটেন্যান্ট সারওয়ার সাদকে রাজকীয় জর্ডান
বিমান বাহিনীতে প্রেষণে প্রেরণ করা হয়।
সেখানে তারা রাজকীয় জর্ডান বিমান বাহিনীর
Hawker Hunter অপারেট করতেন। তারা সেখানে
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।
৫জুন ১৯৬৭ সালে আল মাফরাক থেকে উড্ডয়নের পর
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম একটি Mystere
IV কে তার দ্বিতীয়শিকারে পরিণত করেন। এই
ঘটনার মাত্র দুই দিন পর, ৭ জুন ১৯৬৭ ইরাকী বিমান
বাহিনীতে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে পশ্চিম ইরাকী
এয়ার ফিল্ড H-3 এ তিনি অবস্থান করাকালে,
ইসরাইলী জঙ্গি জেট এয়ার ফিল্ড H-3 আক্রমণ
করে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট
সাইফুল আজম ইরাকী Hawker Hunter বিমান নিয়ে
উড্ডয়ন করে একটি Mirage III এবং একটি Vautour
Bomber ভূপাতিত করেন (Vautour Bomber টির
ছোট্ট কিছু ভগ্নাবশেষ সাইফুল আজমের Hunter এ
গেঁথে থাকতে দেখা যায়, যা থেকে তার
সহকর্মীরা বুঝতে পারেন তিনি বিমানটিকে
আকাশেই গুড়িয়ে দিয়েছেন)। উল্লেখ্য Mirage III
সাইফুল আজমের Hawker Hunter এর তুলনায় বহুগুণে
Superior। এছাড়া Mystere IV ও এয়ার টু এয়ার
কমব্যাটের ক্ষেত্রে Hawker Hunter এর চেয়ে
Superior। Mirage III, Mystere IV সাইফুল আজমের
Skill, Tactics ও সাহসের কাছে পরাস্ত হয়েছে।
কিন্তু সাইফুল আযম ও তার স্কোয়াড্রন সাফল্য লাভ
করলেও অন্যান্য জর্দানি বিমানগুলি ব্যার্থ হয়
এবং ইসরাইলি বোমা বর্ষনে বেশিরভাগ জর্দানি
বিমান ভুমিতেই ধ্বংস হয়ে যায় ও রানওয়েগুলি
ক্ষতি গ্রস্ত হয়। সাইফুল আযম তার সাফল্যের জন্য
জর্দানিদের প্রসংশা ও শ্রদ্ধা পান। বাদশাহ
হুসাইন তার নিজের গাড়িতে করে সাইফুল আযমকে
তার মেস এরৎ পেীছিয়ে দেন। জর্দান থেকে আর
উড্ড্য়ন সম্ভব না হওয়ায় জর্দানি বিমান বাহিনীর
পাইলটরা প্রতিবেশি ইরাকি বিমান বাহিনীতে
সহায়তার সিদ্ধান্ত নেয়।
সাইফুল আযম আবারও পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার
পরিবর্তে ইরাকি বিমান বাহিনীর হয়ে ইসরাইলের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। এবারও দক্ষতার
পরিচয় দিয়ে ইরাকি বিমান বাহিনীর হকার
হান্টার বিমান নিয়ে তিনি তৎকালিন সর্বাধুনিক
ফ্রান্সের "মিরেজ-৩সি" বিমান
ভুপাতিত করেন। তিনি একটি ”ভেটর”বোমারু
বিমানও ভুপাতিত করেন। তার অসাধারণ কৌশল ও
সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে জর্দান সরকার ”ওয়াসমা ই
ইস্তেকলাল” বা স্বাধিনতা পদক এবং ইরাক কর্তক
”নওয়াত-ই সুজ্জাত” পদকে ভুষিত করে। জর্ডান ও
ইরাক উভয় দেশই তাকে বীর পদক প্রদান করে।
১৯৭১ সালে বাঙ্গালী হওয়ায় তাকে পাকিস্তান
বিমান বাহিনী Grounded করে। পূর্ব পাকিস্তান
স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশের জন্ম হলে তিনি নতুন
গঠিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর Director of
Flight Safety এবং পরবর্তীতে Director of
Operation হিসেবে নিয়োগ পান।
১৯৭৭ সালে তিনি উইং কমান্ডার পদে পদোন্নতি
পান এবং ঢাকা বিমান বাহিনী ঘাটির বেস
কমান্ডার হন। ১৯৮০ সালে সাইফুল আজম
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন
পদে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণ করার পর তিনি
দুই টার্মে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের
পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি
Film Development Corporation এর ব্যবস্থাপনা
পরিচালকও ছিলেন।
তিনি ১৯৯১-৯৬ সালে পাবনা-৩ আসন থেকে
(চাটমোহর উপজেলা, ফরিদপুর
উপজেলা ও ভাঙ্গুরা উপজেলা) বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাদী দলের (BNP) পক্ষে পঞ্চম জাতীয়
সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি
বর্তমানে নাতাশা ট্রেডিং এজেন্সি, লিঃ (এয়ার
ক্রাফট ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান)
এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি একটি ট্রাভেল
এজেন্সিও পরিচালনা করেন। স্ত্রী নাতাশা, তিন
সন্তানের জনক তিনি।
২০০১ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনী
বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে। তিনি বাইশ জন
“Living Eagles”এর একজন ।
খগড়বাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চ মাধ্যমিক
স্তরের পর ১৯৫৬ সালে তিনি পশ্চিম পাকিস্তান
যান। ১৯৬০ সালে তিনি জিডি পাইলট ব্রাঞ্চের
একজন পাইলট হন।
জুন ৬ , ১৯৬৭। আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ চলছে। তৎকালীন
পাকিস্তান এয়ারফোর্স থেকে ডেপুটেশনে আসা
গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজম পশ্চিম ইরাকের এক
বিমান ঘাটিতে অবস্থান করছে। অনেকটা
ভোজবাজির মতোই আকাশে চারটা ইজ্রায়েলি
বিমানের ( যাদের কে এস্কোর্ট করছিলো দুইটা
ইস্রায়েলি মিরেজ ফাইটার ) উদয় হয়। আকস্মিক
আক্রমণে ইরাকি এয়ারফোর্স বিপর্জস্ত ।
ইসারায়েলি ক্যাপ্টেন ড্রোর একের পর এক ইরাকি
বিমানের ভবলীলা সাংগ করে চলেছে। তার সাথে
সঙ্গী হিসাবে আছে আরেক ইজ্রায়েলি ক্যাপ্টেন
গোলান। এই অবস্থায় আকাশে উড়াল দেয় সাইফুল
আজম। উড়াল দেবার কিছুক্ষণের মাঝেই তার
উইংম্যান কেও ফেলে দেয় ইজ্রায়েলি ক্যাপ্টেন
ড্রোর। কিন্তু সাইফুল আজম অন্য ধাতুতে গড়া। একে
একে গোলান, ড্রোর সবার প্লেন ফেলে দেয় সে।
মোটামুটি একা লড়াই করে ইজ্রায়েলি বিমান
গুলোকে ইরাকের আকাশ ছাড়তে বাধ্য করে সে।
ক্যাপ্টেন ড্রোর এবং গোলান কে পরে যুদ্ধবন্দী
হিসাবে আটক রাখা হয়।
এখন পর্যন্ত আধুনিক যুদ্ধের ইতিহাসে ইসরায়েলের
সর্বোচ্চ সংখ্যক বিমান ঘায়েল করার রেকর্ড
ক্যাপ্টেন সাইফুল আজমের।
এছাড়া প্রথম বিশবযুদ্ধ থেকে শুরু করে এপর্যন্ত
সর্বোচ্চ সংখ্যক শত্রুপক্ষের বিমান ঘায়েল করার
রেকর্ড এর তালিকায় ও তিনি উপরের দিকে আছেন।
আরব-ইস্রায়েল যুদ্ধে অসাধারণ অবদান রাখার
স্বীকৃতি স্বরূপ জর্দান-ইরাক-পাকিস্তান তাকে
বীরত্ব সূচক পদকে ভূষিত করে। তিনটি দেশের
সম্মান সূচক সামরিক পদক অর্জনের ঘটনা সামরিক
ইতিহাসে বিরল। একই সাথে তিনটি দেশের হয়ে
যুদ্ধ করা এবং একই ব্যাক্তির দ্বারা একের অধিক
শ্ত্রু রাষ্ট্রের (ভারত এবং ইসরায়েল) বিমান
ভূপাতিত করার বিরল রেকর্ডের অধিকারীও এই একই
ব্যাক্তি।
১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তাকে সাময়িক
ভাবে সারাগোধাতে অবস্থিত ১৭
স্কোয়াড্রন এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফ্লাইট
লেফটেন্যান্ট সাইফুল আযম এ সময় এফ-৮৬ স্যাবর
জেট বিমান এর পাইলট হিসেবে প্রধানত পদাতিক
সহায়ক মিশন পরিচালনা করতেন। ১৯৬৫ সালের ১৯ এ সেপ্টেম্বর বিখ্যাত চাবিন্দা ট্যাংক যুদ্ধে অংশ
নেন তিনি এবং বিমান থেকে রকেট ও গোলা বর্ষন
করে একাধিক ভারতিয় ট্যাংককে ধ্বংস ও অকার্যকর
করেন। এসময় চারটি ভারতিয় ”Gnat”জঙ্গি বিমান
তাদের উপর আক্রমন করে। সাধারন ভাবে বিমান
থেকে ভুমিতে যুদ্ধের উপযোগি অস্ত্র সজ্জিত
থাকায় এসময় পাকিস্তানি বিমানগুলির পালিয়ে
যাওয়াই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ফ্লাইট
লেফটেনান্ট সাইফুল আযম রুখে দাড়ান এবং বিমান
যুদ্ধ বা ডগ ফাইটে একটি ভারতিয় ”Gnat” জঙ্গি
বিমান ভুপাতিত করেন। এই কৃতিত্বের জন্য তাকে
পাকিস্তানে ”সিতারা-ইজুরায়ত” (বাংলাদেশের
বীরবিক্রম এর সমতুল্য, পাকিস্তানের তৃতীয়
সামরিক বীরত্বের খেতাব) পদকে ভুষিত করা হয়।
১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ
চলাকালীন সময়ে তিনি চারটি F-86 Sabre এর
ফরমেশনে অংশ নিয়ে ভারতের ভূমীতে আক্রমণের
উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করেন। হঠাৎ দুইটি ভারতীয়
Folland Gnat (Folland Gnat, F-86 এর চেয়ে Superior) তাদের পথ রোধ করে। ঘটনার জেরে সৃষ্ট ডগফাইটে সাইফুল আজম একটি Folland Gnat গোলাবর্ষণ করে ভূপাতিত করেন (পাইলট,ফ্লাইং
অফিসার ভি মায়াদেব নিরাপদে Ejectকরে
বেরিয়ে আসলে তাকে যুদ্ধবন্দি করা হয়). অন্য
Folland Gnat টি রনেভঙ্গ দিয়েছে বুঝতে পারার
পর সেটিকে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়।
১৯৬৬ সালের নভেম্বর মাসে তৎকালীন ফ্লাইট
লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম এবং অপর আরেক জন
পাকিস্তানী বিমান বাহিনীর অফিসার ফ্লাইট
লেফটেন্যান্ট সারওয়ার সাদকে রাজকীয় জর্ডান
বিমান বাহিনীতে প্রেষণে প্রেরণ করা হয়।
সেখানে তারা রাজকীয় জর্ডান বিমান বাহিনীর
Hawker Hunter অপারেট করতেন। তারা সেখানে
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।
৫জুন ১৯৬৭ সালে আল মাফরাক থেকে উড্ডয়নের পর
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম একটি Mystere
IV কে তার দ্বিতীয়শিকারে পরিণত করেন। এই
ঘটনার মাত্র দুই দিন পর, ৭ জুন ১৯৬৭ ইরাকী বিমান
বাহিনীতে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে পশ্চিম ইরাকী
এয়ার ফিল্ড H-3 এ তিনি অবস্থান করাকালে,
ইসরাইলী জঙ্গি জেট এয়ার ফিল্ড H-3 আক্রমণ
করে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট
সাইফুল আজম ইরাকী Hawker Hunter বিমান নিয়ে
উড্ডয়ন করে একটি Mirage III এবং একটি Vautour
Bomber ভূপাতিত করেন (Vautour Bomber টির
ছোট্ট কিছু ভগ্নাবশেষ সাইফুল আজমের Hunter এ
গেঁথে থাকতে দেখা যায়, যা থেকে তার
সহকর্মীরা বুঝতে পারেন তিনি বিমানটিকে
আকাশেই গুড়িয়ে দিয়েছেন)। উল্লেখ্য Mirage III
সাইফুল আজমের Hawker Hunter এর তুলনায় বহুগুণে
Superior। এছাড়া Mystere IV ও এয়ার টু এয়ার
কমব্যাটের ক্ষেত্রে Hawker Hunter এর চেয়ে
Superior। Mirage III, Mystere IV সাইফুল আজমের
Skill, Tactics ও সাহসের কাছে পরাস্ত হয়েছে।
কিন্তু সাইফুল আযম ও তার স্কোয়াড্রন সাফল্য লাভ
করলেও অন্যান্য জর্দানি বিমানগুলি ব্যার্থ হয়
এবং ইসরাইলি বোমা বর্ষনে বেশিরভাগ জর্দানি
বিমান ভুমিতেই ধ্বংস হয়ে যায় ও রানওয়েগুলি
ক্ষতি গ্রস্ত হয়। সাইফুল আযম তার সাফল্যের জন্য
জর্দানিদের প্রসংশা ও শ্রদ্ধা পান। বাদশাহ
হুসাইন তার নিজের গাড়িতে করে সাইফুল আযমকে
তার মেস এরৎ পেীছিয়ে দেন। জর্দান থেকে আর
উড্ড্য়ন সম্ভব না হওয়ায় জর্দানি বিমান বাহিনীর
পাইলটরা প্রতিবেশি ইরাকি বিমান বাহিনীতে
সহায়তার সিদ্ধান্ত নেয়।
সাইফুল আযম আবারও পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার
পরিবর্তে ইরাকি বিমান বাহিনীর হয়ে ইসরাইলের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। এবারও দক্ষতার
পরিচয় দিয়ে ইরাকি বিমান বাহিনীর হকার
হান্টার বিমান নিয়ে তিনি তৎকালিন সর্বাধুনিক
ফ্রান্সের "মিরেজ-৩সি" বিমান
ভুপাতিত করেন। তিনি একটি ”ভেটর”বোমারু
বিমানও ভুপাতিত করেন। তার অসাধারণ কৌশল ও
সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে জর্দান সরকার ”ওয়াসমা ই
ইস্তেকলাল” বা স্বাধিনতা পদক এবং ইরাক কর্তক
”নওয়াত-ই সুজ্জাত” পদকে ভুষিত করে। জর্ডান ও
ইরাক উভয় দেশই তাকে বীর পদক প্রদান করে।
১৯৭১ সালে বাঙ্গালী হওয়ায় তাকে পাকিস্তান
বিমান বাহিনী Grounded করে। পূর্ব পাকিস্তান
স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশের জন্ম হলে তিনি নতুন
গঠিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর Director of
Flight Safety এবং পরবর্তীতে Director of
Operation হিসেবে নিয়োগ পান।
১৯৭৭ সালে তিনি উইং কমান্ডার পদে পদোন্নতি
পান এবং ঢাকা বিমান বাহিনী ঘাটির বেস
কমান্ডার হন। ১৯৮০ সালে সাইফুল আজম
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন
পদে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণ করার পর তিনি
দুই টার্মে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের
পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি
Film Development Corporation এর ব্যবস্থাপনা
পরিচালকও ছিলেন।
তিনি ১৯৯১-৯৬ সালে পাবনা-৩ আসন থেকে
(চাটমোহর উপজেলা, ফরিদপুর
উপজেলা ও ভাঙ্গুরা উপজেলা) বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাদী দলের (BNP) পক্ষে পঞ্চম জাতীয়
সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি
বর্তমানে নাতাশা ট্রেডিং এজেন্সি, লিঃ (এয়ার
ক্রাফট ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান)
এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি একটি ট্রাভেল
এজেন্সিও পরিচালনা করেন। স্ত্রী নাতাশা, তিন
সন্তানের জনক তিনি।
২০০১ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনী
বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে। তিনি বাইশ জন
“Living Eagles”এর একজন ।
No comments:
Post a Comment