Showing posts with label রূপসী বাংলা. Show all posts
Showing posts with label রূপসী বাংলা. Show all posts

Thursday 12 March 2015

চায়ের রাজধানী সিলেট এর শ্রীমঙ্গলের ৭ রং চায়ের ৭ রহস্য

সেদিন চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে ঘুরেছিলাম সারাদিন। তাই সারাদিনের ক্লান্তি একটু ঝেড়ে ফেলতে যেন চায়ের বিকল্প ছিল না। চা-পানের অভ্যাস খুব একটা না থাকলেও সাতরঙা চা পানের ইচ্ছেটা দমন করতে পারলাম না সোজা চলে গেলাম সাতরঙা চায়ের উদ্ভাবক কারিগর রমেশ রাম গৌড়ের নীলকন্ঠ চা-কেবিনে
একটি স্বচ্ছ কাচের গ্লাস। তাতে পানি।পানিতে আবার রয়েছে সাতটি স্তর।প্রতিটি স্তরের রং আলাদা। রংগুলো পানির
না গ্লাসের বুঝতে একটু কষ্টই হয়। যিনি প্রথম বিষয়টি দেখবেন তার কাছে এটি চা ভাবতে কষ্ট হবে। আর যিনি দেখেছেন আগেও, নিয়েছেন স্বাদ,তিনি ভাববেন এটা কীভাবে সম্ভব যদি জানতে পারতাম! অর্থাৎ, এটা কীভাবে সম্ভব! কী এর রহস্য।
শ্রীমঙ্গলের সাতরঙা চায়ের খ্যাতি দেশজুড়ে এমনকি শ্রীমঙ্গলে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভোলেন নি সাতরঙা চায়ের উদ্ভাবক রমেশের চা পান করতে। রমেশের রহস্য ভেঙে এখন দেশের আরো দু’এক জায়গায় তৈরি হয় সাতরঙা চা। তবে চায়ের উপাদান, তৈরির কৌশল এখনো অজানা। সেই রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করেছি মাত্র। আর এটা সম্ভব হয়েছে নীলকন্ঠ চা-কেবিনের মালিক ও সাতরঙা চায়ের উদ্ভাবক ও কারিগর রমেশ রাম গৌড়ের সহযোগিতা ও আন্তরিকতায়। একটু আলাপেই বেশ ভাব জমলো রমেশ দাদার সঙ্গে। দাদার কাছে জানতে চাইলাম সাত স্তরে সাত রঙের রহস্য। বললেন, ভিতরের ঘরে চলুন। গিয়ে দেখলাম ছোট একটি ঘর।সেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ।দেখলাম সাতটি আলাদা গ্লাসে সাত রঙের চা সাজানো। সেখান থেকে একটু একটু করে নিয়ে সাজাচ্ছেন সাতটি স্তর। বেশ ভালো মনের মানুষ এই রমেশ রাম গৌড়। এভাবে এর আগে কাউকে দেখান নি বলে জানালেন তিনি।আমি প্রস্তাব করলাম প্রতিটি স্তর আমাকে তৈরি করে দেখানোর। রাজি হলেন।প্রথম স্তর, অর্থাৎ একেবারে নিচের স্তরের রংটা ঠিক চায়ের মতো না। এই স্তরের চায়ের উপাদান আদা, গ্রিন-টি ও চিনি। সবচেয়ে ঘন স্তর এটি।দ্বিতীয় স্তরের উপাদান শুধু লিকার ও চিনি।তৃতীয় স্তরের উপাদান চা, দুধ ও চিনি।চতুর্থ স্তরে রয়েছে গ্রিন টি, সাধারণ চা, দুধ ও চিনি।পঞ্চম স্তরের উপাদান গ্রিন টি ও চিনি। ষষ্ঠ স্তরের লেবুর জল ও চিনিই প্রধান উপাদান।সবশেষ অর্থাৎ, সবার উপরের স্তরের উপাদান গ্রিন
টি লেবু ও চিনি।পুরো প্রক্রিয়ায় রমেশ দাদা আমাকে একটি জিনিস শুধু নিষেধ করলেন। সেটা হলো, বিভিন্ন পাত্রে মেশানো তার উপাদানগুলোর ছবি যেন না তুলি এবং প্রকাশ না করি।সবশেষে তার কাছে দুটো প্রশ্ন ছিল।নাড়াচড়া করলে এক স্তরের চা আরেক স্তরে মিশবে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন,
চামচ দিয়ে না ঘুটে যতই নাড়াচাড়া করুন এক স্তর আরেক স্তরে মিশবে না। পরীক্ষা করে দেখলাম
বিষয়টি একেবারেই ঠিক।আবার প্রশ্ন করলাম এই না মেশার প্রধান কারণ কি? সেটাই আসলে মূল রহস্য। রমেশ দাদা এবার মুচকি হেসে বললেন, সেটা না বললে হয় না। বললাম সবই তো দেখালেন, এটুকু বলেই ফেলেন না। তারপর আস্তে আস্তে বললেন, জলের ঘনত্ব।সব বলার পরও একটি রহস্য কিন্তু রমেশ দাদা তার কাছে রেখেই দিলেন। সেটিও কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, মেশানোর পদ্ধতিটা। বললেন, এই মেশানোর
ছবিটা যেন না তুলি। এখানেই দক্ষতা কারিগরের।এটুকু রহস্য, রহস্যই থাক!উল্লেখ্য, প্রতি কাপ গ্লাস চায়ের দাম ৭০ টাকা।চাইলে কেউ তিন, চার বা পাঁচ স্তর পর্যন্তও খেতে পারেন। তখন প্রতি স্তরের দাম পড়বে ১০ টাকা করে। সাত স্তরের স্বাদও কিন্তু আলাদা

[[এমদাদুল হকের (মৌলভীবাজার প্রতিনিধি) লিখা]]

Sunday 1 March 2015

লাউয়াছড়া

লাউয়াছড়ার প্রাকৃতিক রুপ
............................
দিনদিন পৃথিবীতে মানুষ বৃদ্ধি পাচ্ছে আর তার
সাথে সাথে ধ্বংস হচ্ছে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ।
মানুষের জীবনযাপন ক্রমশ হয়ে উঠছে নগর কেন্দ্রীক। কিন্তু
যে হারে প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে মানুষের
চাহিদা বাড়ছে অরণ্যে ভ্রমণের জন্য। প্রতিদিন ধ্বংস
হচ্ছে আমাদের শষ্যশ্যামলা বাংলার শ্যামল প্রকৃতি।
বৃদ্ধি পাচ্ছে শহরের ব্যস্ত জীবন কিন্তু শহরের ব্যস্ত জীবনের
ফাঁকে এখন ঘন ঘন মানুষ পেতে চায় শ্যামল অভয়ারণ্যের
ছোঁয়া কিংবা একটু নিস্তব্ধতার একাকীত্ব।
আপনার এই চাহিদা পূরণ করতে আপনি ঘুরে আসতে পারেন
দেশের পূর্বাঞ্চলের একমাত্র বন গবেষণা কেন্দ্র
‘লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক’। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য
লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কের জীবজন্তুর হুংকার,
ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ, বানরের লাফালাফি, ঝাঁকবাঁধা হুলুকের
কলকাকলী একটু সময়ের জন্য হলেও আপনার ব্যস্ত জীবনের
কান্তি দূর করে মনের তৃপ্ততা এনে দিবে। প্রায় ১২ শত হেক্টর
এলাকা জুড়ে লাউয়াছড়া পার্কের ভিতর আড়াই হাজার
প্রজাতির পাখি, ১০ প্রজাতির সরিসৃপ, অর্ধশত প্রজাতির
জীবজন্তু রয়েছে। এর ভিতরে রয়েছে কয়েকটি খাসিয়া পুঞ্জি,
পার্কের পাহাড় বিস্তৃত লম্বা বৃ েখাসিয়ারা খাসিয়া পানের
চাষ করে। পার্কের এক পাশে রয়েছে আনারসের বাগান, এক
পাশে চায়ের বাগান আবার কোথায় রয়েছে লেবু বাগান।
জঙ্গলের ভিতর রয়েছে কয়েকটি পাহাড়ী ছড়া। পুরো ন্যাশনাল
পার্কটি শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ পাকা মহাসড়ক ও সিলেট
আখাউড়া রেলওয়ে সেকশনের রেললাইন দ্বারা ৩ খন্ডে বিভক্ত।
কিন্তু রেললাইন ও পাকাসড়ক দ্বারা বিভক্ত হলেও পার্কের
ভিতর তেমন কোন বাড়ী-ঘর না থাকায় ও ঘন জঙ্গলের
কারণে একাকীত্বের তেমন কোন সমস্যা হয়না। লাউড়াছড়ায়
এক ধরণের পোকা রয়েছে, যার শব্দ শোনার পর আপনার
আচমকাই বা হঠাৎ করেই যেন আপনার ভালো লাগতে শুরু করবে।
মনে হবে যেন আপনি অন্য কোন পৃথিবীতে পা দিয়েছেন। এই
পোকার শব্দকে ‘ফরেস্ট মিউজিক’ বলে অখ্যায়িত করেছেন
পার্কের ট্যুরিস্টরা। লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কেই
রয়েছে বিরল প্রজাতির একটি বৃ। যেই বৃটিকে নিয়ে নানা জনের
রয়েছে না কৌতুহল। একসময় এই বৃরে গায়ে লেখা ছিল
‘কোরোফম’। দীর্ঘ দিন এই নাম থাকায়
দেশবাসী এটিকে ‘কোরোফম’ বলেই জানেন। মাস ছয় এক
পূর্বে হঠাৎ করে এর গাত্র থেকে কোরোফম সাইন
বোর্ডটি নামিয়ে এর গায়ে টাঙানো হয়েছিল ‘আফ্রিকান অক
ট্রি’। বর্তমানে এই নেম পেটটিও
নামিয়ে লেখা হয়েছে ‘একটি বিরল প্রজাতির বৃ’।
লোকমুখে প্রচারিত রয়েছে এই বৃটি কোটি টাকা মূল্যের।
এটি নাকি একবার বিমান আটকিয়েছিল। এটির পাতার গন্ধ
শুকলে নাকি মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেত। তবে বন বিভাগের কাছ
থেকে এরকম কোন সত্যতাই পাওয়া যায়নি।
একটি সূত্রে জানা যায়, এ প্রজাতির বৃ বিরল। বাংলাদেশে এ
প্রজাতি আর কোথাও নেই। যাই হোক নানাভাবে এর খবর
দেশে ছড়িয়ে পড়ায় মানুষ এই বিরল প্রজাতির বৃটিকে প্রধান
উদ্দেশ্য করে লাউয়াছড়ায় যায়। বৃটি পার্কের ফরেস্ট রেস্ট
হাউজের পার্শে অবস্থিত। বর্তমানে গাছটির
চারপাশে কাটা তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
কোথায় লাউয়াছড়ার অবস্থান?
.......................................
ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে বাস
কিংবা ট্রেনযোগে শ্রীমঙ্গলে পৌঁছুবেন। শ্রীমঙ্গল
থেকে ভানুগাছ-কমলগঞ্জের রাস্তায় ৭ কি·মি· এগুোলেই
লাউয়াছড়া পার্কের সীমানা। এটি শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ
উপজেলায় মধ্যে পড়েছে। তবে বেশিভাগ অংশ পড়েছে কমলগঞ্জ
উপজেলায়। শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ রোড থেকে বাসে জনপ্রতি ৬
টাকা, প্রাইভেট কার নিয়ে গেলে ৩শ থেকে ৫শ টাকা, মিশুক
নিয়ে গিলে ১৫০ টাকায় ঘুরে আসতে পারেন।
কোথায় থাকবেন ?
..............................
লাউয়াছড়ায় রয়েছে ১টি ফরেস্ট রেস্ট হাউজ, ফরেস্টের
অনুমতি নিয়ে আপনি লাউয়াছড়া রেস্ট হাউজেই
থাকতে পারেন। এছাড়াও শ্রীমঙ্গল হবিগঞ্জ
রোডে রয়েছে এসি, নন এসি, ঠান্ডা গরম পানি, টিভি, ফোন
ও গাড়ী পার্কিংএর সুবিধা সহ ‘টি টাউন রেস্টহাউজ’। হোটেল
ইউনাইটেড, সবুজ বাংলা, মুক্ত, আল-রহমান, নীলিমা, মুন,
সন্ধ্যা সহ ২৯টি হোটেল ও ২০/২৫টি সরকারী রেস্ট হাউজ।
হোটেলগুলোতে থাকতে আপনার ব্যয় হবে ৪০ থেকে ১০০০
টাকা পর্যন্ত।
খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা
.............................
শ্রীমঙ্গলে খাওয়াদাওয়া জন্য মাছ, মাংস, সব্জি সবরকম
আইটেমই পাওয়া যায়। তবে হিন্দু অধ্যুশিত
এলাকা বলে শ্রীমঙ্গলের কোন হোটেলে গরুর মাংস
রান্না হয়না। গরুর মাংস খেতে হলে আপনাকে রেস্ট হাউজের
বাবুর্চিকে দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে।
কি কি সাথে নিবেন?
..........................
শীতের সময় আসলে অবশ্যই শীতের কাপড় সঙ্গে আনতে হবে।
স্টিল
ক্যামেরা বা ম্যুভি ক্যামেরা থাকলে সাথে নিয়ে আসতে পারেন।
বাইনুকুলার থাকলে ভালো হয়। জঙ্গলের ভিতর প্রবেশের
পূর্বে হালকা খাবার ও পানি নিয়ে যেতে পারেন। কারণ
সেখানে কোন খাবার পাওয়া যায়না। বর্ষার সময়
ছাতা নিতে হবে কারণ শ্রীমঙ্গলের হঠাৎ বৃষ্টির
সমস্যা রয়েছে। শীত-গ্রীষ্ম উভয় সময়েই সম্ভব হলে শহর
থেকে ১ জন গাইড নিতে পারেন।
কিকি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ?
................................................
লাউয়াছড়া পার্কে রয়েছে এক ধরণের চিনা জুক। যা ঘাসের
সাথে মিশে থাকে এবং এর রঙও ঘাসের মতো সবুজ।
আপনি ঘাসের উপর দিয়ে যদি হাঁটেন চিনা জুক কখন
আপনাকে আকড়ে ধরবে আপনি টেরই পাবেন না। যদি দেখেন
আপনার শরীরের কোথায় থেকে রক্ত পড়ছে তাহালে বুঝবেন
চিনা জুক আপনাকে কামড় দিয়ে চলে গেছে।
তাছাড়াও আপনাকে সবসময় স্মরণ
রাখতে হবে লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কের জীববৈচিত্র্য রায়
সরকার সকল প্রকার আহরণ নিষিদ্ধ করেছে।
পার্কে ভ্রমণকালে কোন গাছের পাতা ছেঁড়া বা কোন পশু-
পাখি বা কীট-পতঙ্গকে ডিসটার্ব করা যাবে না। জঙ্গলের
ভিতরে একা ভ্রমণ করতে অবশ্যই ভয় করবে। তবে কয়েকজন
হলে ভালো হয়। নতুবা শ্রীমঙ্গল থেকে পরিচিত
কাউকে নিয়ে যেতে পারেন। সবশেষে যদি সময় পান
তাহলে দেখে আসতে পারেন মাগুরছড়া গ্যাসকূপ।
দেখতে পারেন ১৯৯৭ সালের কূপ বিস্ফোরনে সৃষ্ট
অগ্নিকান্ডে পুড়ে যাওয়া বৃ সেখানে এখানো কালের
স্বাী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটি লাউয়াছড়া ফরেস্ট মুখ
থেকে ভানুগাছের দিকে পাকা সড়কে ২
কিলো অন্তরে রয়েছে।
কিভাবে ফিরবেন?
............................
শ্রীমঙ্গল থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে করে অথবা বাস
যোগে চট্টগ্রাম-ঢাকা পৌঁছাতে হবে। চট্টগ্রামের জন্য
রয়েছে প্রতি শুক্রবার ছাড়া দুপুর ১২টায় পাহাড়িকা, রাত
সাড়ে ১১ টায় উদয়ন সহ দিনে-রাতে আরো দু’টি লোকাল
ট্রেন। ঢাকার জন্য রয়েছে সকাল সাড়ে ১০টায় জয়ন্তিকা, ৫টায়
পারাবত ও রাত ১২টায় উপবন সহ আরো দু’টি লোকাল ট্রেন।
ট্রেনে শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকা পৌছাতে ৫/৬ ঘন্টার সময়
লাগবে। কিন্তু বাসে সময় লাগে সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা।
আপনি যদি বাসে যেতে চান তাহলে সিলেট উত্তরবঙ্গ, সিলেট
দণিবঙ্গ, সিলেট কলকাতা, সিলেট
আগরতলা যাতায়াতকারী পরিবহণ-এ আসতে পারেন।
Showing posts with label রূপসী বাংলা. Show all posts
Showing posts with label রূপসী বাংলা. Show all posts

Thursday 12 March 2015

চায়ের রাজধানী সিলেট এর শ্রীমঙ্গলের ৭ রং চায়ের ৭ রহস্য

সেদিন চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে ঘুরেছিলাম সারাদিন। তাই সারাদিনের ক্লান্তি একটু ঝেড়ে ফেলতে যেন চায়ের বিকল্প ছিল না। চা-পানের অভ্যাস খুব একটা না থাকলেও সাতরঙা চা পানের ইচ্ছেটা দমন করতে পারলাম না সোজা চলে গেলাম সাতরঙা চায়ের উদ্ভাবক কারিগর রমেশ রাম গৌড়ের নীলকন্ঠ চা-কেবিনে
একটি স্বচ্ছ কাচের গ্লাস। তাতে পানি।পানিতে আবার রয়েছে সাতটি স্তর।প্রতিটি স্তরের রং আলাদা। রংগুলো পানির
না গ্লাসের বুঝতে একটু কষ্টই হয়। যিনি প্রথম বিষয়টি দেখবেন তার কাছে এটি চা ভাবতে কষ্ট হবে। আর যিনি দেখেছেন আগেও, নিয়েছেন স্বাদ,তিনি ভাববেন এটা কীভাবে সম্ভব যদি জানতে পারতাম! অর্থাৎ, এটা কীভাবে সম্ভব! কী এর রহস্য।
শ্রীমঙ্গলের সাতরঙা চায়ের খ্যাতি দেশজুড়ে এমনকি শ্রীমঙ্গলে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভোলেন নি সাতরঙা চায়ের উদ্ভাবক রমেশের চা পান করতে। রমেশের রহস্য ভেঙে এখন দেশের আরো দু’এক জায়গায় তৈরি হয় সাতরঙা চা। তবে চায়ের উপাদান, তৈরির কৌশল এখনো অজানা। সেই রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করেছি মাত্র। আর এটা সম্ভব হয়েছে নীলকন্ঠ চা-কেবিনের মালিক ও সাতরঙা চায়ের উদ্ভাবক ও কারিগর রমেশ রাম গৌড়ের সহযোগিতা ও আন্তরিকতায়। একটু আলাপেই বেশ ভাব জমলো রমেশ দাদার সঙ্গে। দাদার কাছে জানতে চাইলাম সাত স্তরে সাত রঙের রহস্য। বললেন, ভিতরের ঘরে চলুন। গিয়ে দেখলাম ছোট একটি ঘর।সেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ।দেখলাম সাতটি আলাদা গ্লাসে সাত রঙের চা সাজানো। সেখান থেকে একটু একটু করে নিয়ে সাজাচ্ছেন সাতটি স্তর। বেশ ভালো মনের মানুষ এই রমেশ রাম গৌড়। এভাবে এর আগে কাউকে দেখান নি বলে জানালেন তিনি।আমি প্রস্তাব করলাম প্রতিটি স্তর আমাকে তৈরি করে দেখানোর। রাজি হলেন।প্রথম স্তর, অর্থাৎ একেবারে নিচের স্তরের রংটা ঠিক চায়ের মতো না। এই স্তরের চায়ের উপাদান আদা, গ্রিন-টি ও চিনি। সবচেয়ে ঘন স্তর এটি।দ্বিতীয় স্তরের উপাদান শুধু লিকার ও চিনি।তৃতীয় স্তরের উপাদান চা, দুধ ও চিনি।চতুর্থ স্তরে রয়েছে গ্রিন টি, সাধারণ চা, দুধ ও চিনি।পঞ্চম স্তরের উপাদান গ্রিন টি ও চিনি। ষষ্ঠ স্তরের লেবুর জল ও চিনিই প্রধান উপাদান।সবশেষ অর্থাৎ, সবার উপরের স্তরের উপাদান গ্রিন
টি লেবু ও চিনি।পুরো প্রক্রিয়ায় রমেশ দাদা আমাকে একটি জিনিস শুধু নিষেধ করলেন। সেটা হলো, বিভিন্ন পাত্রে মেশানো তার উপাদানগুলোর ছবি যেন না তুলি এবং প্রকাশ না করি।সবশেষে তার কাছে দুটো প্রশ্ন ছিল।নাড়াচড়া করলে এক স্তরের চা আরেক স্তরে মিশবে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন,
চামচ দিয়ে না ঘুটে যতই নাড়াচাড়া করুন এক স্তর আরেক স্তরে মিশবে না। পরীক্ষা করে দেখলাম
বিষয়টি একেবারেই ঠিক।আবার প্রশ্ন করলাম এই না মেশার প্রধান কারণ কি? সেটাই আসলে মূল রহস্য। রমেশ দাদা এবার মুচকি হেসে বললেন, সেটা না বললে হয় না। বললাম সবই তো দেখালেন, এটুকু বলেই ফেলেন না। তারপর আস্তে আস্তে বললেন, জলের ঘনত্ব।সব বলার পরও একটি রহস্য কিন্তু রমেশ দাদা তার কাছে রেখেই দিলেন। সেটিও কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, মেশানোর পদ্ধতিটা। বললেন, এই মেশানোর
ছবিটা যেন না তুলি। এখানেই দক্ষতা কারিগরের।এটুকু রহস্য, রহস্যই থাক!উল্লেখ্য, প্রতি কাপ গ্লাস চায়ের দাম ৭০ টাকা।চাইলে কেউ তিন, চার বা পাঁচ স্তর পর্যন্তও খেতে পারেন। তখন প্রতি স্তরের দাম পড়বে ১০ টাকা করে। সাত স্তরের স্বাদও কিন্তু আলাদা

[[এমদাদুল হকের (মৌলভীবাজার প্রতিনিধি) লিখা]]

Sunday 1 March 2015

লাউয়াছড়া

লাউয়াছড়ার প্রাকৃতিক রুপ
............................
দিনদিন পৃথিবীতে মানুষ বৃদ্ধি পাচ্ছে আর তার
সাথে সাথে ধ্বংস হচ্ছে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ।
মানুষের জীবনযাপন ক্রমশ হয়ে উঠছে নগর কেন্দ্রীক। কিন্তু
যে হারে প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে মানুষের
চাহিদা বাড়ছে অরণ্যে ভ্রমণের জন্য। প্রতিদিন ধ্বংস
হচ্ছে আমাদের শষ্যশ্যামলা বাংলার শ্যামল প্রকৃতি।
বৃদ্ধি পাচ্ছে শহরের ব্যস্ত জীবন কিন্তু শহরের ব্যস্ত জীবনের
ফাঁকে এখন ঘন ঘন মানুষ পেতে চায় শ্যামল অভয়ারণ্যের
ছোঁয়া কিংবা একটু নিস্তব্ধতার একাকীত্ব।
আপনার এই চাহিদা পূরণ করতে আপনি ঘুরে আসতে পারেন
দেশের পূর্বাঞ্চলের একমাত্র বন গবেষণা কেন্দ্র
‘লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক’। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য
লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কের জীবজন্তুর হুংকার,
ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ, বানরের লাফালাফি, ঝাঁকবাঁধা হুলুকের
কলকাকলী একটু সময়ের জন্য হলেও আপনার ব্যস্ত জীবনের
কান্তি দূর করে মনের তৃপ্ততা এনে দিবে। প্রায় ১২ শত হেক্টর
এলাকা জুড়ে লাউয়াছড়া পার্কের ভিতর আড়াই হাজার
প্রজাতির পাখি, ১০ প্রজাতির সরিসৃপ, অর্ধশত প্রজাতির
জীবজন্তু রয়েছে। এর ভিতরে রয়েছে কয়েকটি খাসিয়া পুঞ্জি,
পার্কের পাহাড় বিস্তৃত লম্বা বৃ েখাসিয়ারা খাসিয়া পানের
চাষ করে। পার্কের এক পাশে রয়েছে আনারসের বাগান, এক
পাশে চায়ের বাগান আবার কোথায় রয়েছে লেবু বাগান।
জঙ্গলের ভিতর রয়েছে কয়েকটি পাহাড়ী ছড়া। পুরো ন্যাশনাল
পার্কটি শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ পাকা মহাসড়ক ও সিলেট
আখাউড়া রেলওয়ে সেকশনের রেললাইন দ্বারা ৩ খন্ডে বিভক্ত।
কিন্তু রেললাইন ও পাকাসড়ক দ্বারা বিভক্ত হলেও পার্কের
ভিতর তেমন কোন বাড়ী-ঘর না থাকায় ও ঘন জঙ্গলের
কারণে একাকীত্বের তেমন কোন সমস্যা হয়না। লাউড়াছড়ায়
এক ধরণের পোকা রয়েছে, যার শব্দ শোনার পর আপনার
আচমকাই বা হঠাৎ করেই যেন আপনার ভালো লাগতে শুরু করবে।
মনে হবে যেন আপনি অন্য কোন পৃথিবীতে পা দিয়েছেন। এই
পোকার শব্দকে ‘ফরেস্ট মিউজিক’ বলে অখ্যায়িত করেছেন
পার্কের ট্যুরিস্টরা। লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কেই
রয়েছে বিরল প্রজাতির একটি বৃ। যেই বৃটিকে নিয়ে নানা জনের
রয়েছে না কৌতুহল। একসময় এই বৃরে গায়ে লেখা ছিল
‘কোরোফম’। দীর্ঘ দিন এই নাম থাকায়
দেশবাসী এটিকে ‘কোরোফম’ বলেই জানেন। মাস ছয় এক
পূর্বে হঠাৎ করে এর গাত্র থেকে কোরোফম সাইন
বোর্ডটি নামিয়ে এর গায়ে টাঙানো হয়েছিল ‘আফ্রিকান অক
ট্রি’। বর্তমানে এই নেম পেটটিও
নামিয়ে লেখা হয়েছে ‘একটি বিরল প্রজাতির বৃ’।
লোকমুখে প্রচারিত রয়েছে এই বৃটি কোটি টাকা মূল্যের।
এটি নাকি একবার বিমান আটকিয়েছিল। এটির পাতার গন্ধ
শুকলে নাকি মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেত। তবে বন বিভাগের কাছ
থেকে এরকম কোন সত্যতাই পাওয়া যায়নি।
একটি সূত্রে জানা যায়, এ প্রজাতির বৃ বিরল। বাংলাদেশে এ
প্রজাতি আর কোথাও নেই। যাই হোক নানাভাবে এর খবর
দেশে ছড়িয়ে পড়ায় মানুষ এই বিরল প্রজাতির বৃটিকে প্রধান
উদ্দেশ্য করে লাউয়াছড়ায় যায়। বৃটি পার্কের ফরেস্ট রেস্ট
হাউজের পার্শে অবস্থিত। বর্তমানে গাছটির
চারপাশে কাটা তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
কোথায় লাউয়াছড়ার অবস্থান?
.......................................
ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে বাস
কিংবা ট্রেনযোগে শ্রীমঙ্গলে পৌঁছুবেন। শ্রীমঙ্গল
থেকে ভানুগাছ-কমলগঞ্জের রাস্তায় ৭ কি·মি· এগুোলেই
লাউয়াছড়া পার্কের সীমানা। এটি শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ
উপজেলায় মধ্যে পড়েছে। তবে বেশিভাগ অংশ পড়েছে কমলগঞ্জ
উপজেলায়। শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ রোড থেকে বাসে জনপ্রতি ৬
টাকা, প্রাইভেট কার নিয়ে গেলে ৩শ থেকে ৫শ টাকা, মিশুক
নিয়ে গিলে ১৫০ টাকায় ঘুরে আসতে পারেন।
কোথায় থাকবেন ?
..............................
লাউয়াছড়ায় রয়েছে ১টি ফরেস্ট রেস্ট হাউজ, ফরেস্টের
অনুমতি নিয়ে আপনি লাউয়াছড়া রেস্ট হাউজেই
থাকতে পারেন। এছাড়াও শ্রীমঙ্গল হবিগঞ্জ
রোডে রয়েছে এসি, নন এসি, ঠান্ডা গরম পানি, টিভি, ফোন
ও গাড়ী পার্কিংএর সুবিধা সহ ‘টি টাউন রেস্টহাউজ’। হোটেল
ইউনাইটেড, সবুজ বাংলা, মুক্ত, আল-রহমান, নীলিমা, মুন,
সন্ধ্যা সহ ২৯টি হোটেল ও ২০/২৫টি সরকারী রেস্ট হাউজ।
হোটেলগুলোতে থাকতে আপনার ব্যয় হবে ৪০ থেকে ১০০০
টাকা পর্যন্ত।
খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা
.............................
শ্রীমঙ্গলে খাওয়াদাওয়া জন্য মাছ, মাংস, সব্জি সবরকম
আইটেমই পাওয়া যায়। তবে হিন্দু অধ্যুশিত
এলাকা বলে শ্রীমঙ্গলের কোন হোটেলে গরুর মাংস
রান্না হয়না। গরুর মাংস খেতে হলে আপনাকে রেস্ট হাউজের
বাবুর্চিকে দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে।
কি কি সাথে নিবেন?
..........................
শীতের সময় আসলে অবশ্যই শীতের কাপড় সঙ্গে আনতে হবে।
স্টিল
ক্যামেরা বা ম্যুভি ক্যামেরা থাকলে সাথে নিয়ে আসতে পারেন।
বাইনুকুলার থাকলে ভালো হয়। জঙ্গলের ভিতর প্রবেশের
পূর্বে হালকা খাবার ও পানি নিয়ে যেতে পারেন। কারণ
সেখানে কোন খাবার পাওয়া যায়না। বর্ষার সময়
ছাতা নিতে হবে কারণ শ্রীমঙ্গলের হঠাৎ বৃষ্টির
সমস্যা রয়েছে। শীত-গ্রীষ্ম উভয় সময়েই সম্ভব হলে শহর
থেকে ১ জন গাইড নিতে পারেন।
কিকি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ?
................................................
লাউয়াছড়া পার্কে রয়েছে এক ধরণের চিনা জুক। যা ঘাসের
সাথে মিশে থাকে এবং এর রঙও ঘাসের মতো সবুজ।
আপনি ঘাসের উপর দিয়ে যদি হাঁটেন চিনা জুক কখন
আপনাকে আকড়ে ধরবে আপনি টেরই পাবেন না। যদি দেখেন
আপনার শরীরের কোথায় থেকে রক্ত পড়ছে তাহালে বুঝবেন
চিনা জুক আপনাকে কামড় দিয়ে চলে গেছে।
তাছাড়াও আপনাকে সবসময় স্মরণ
রাখতে হবে লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কের জীববৈচিত্র্য রায়
সরকার সকল প্রকার আহরণ নিষিদ্ধ করেছে।
পার্কে ভ্রমণকালে কোন গাছের পাতা ছেঁড়া বা কোন পশু-
পাখি বা কীট-পতঙ্গকে ডিসটার্ব করা যাবে না। জঙ্গলের
ভিতরে একা ভ্রমণ করতে অবশ্যই ভয় করবে। তবে কয়েকজন
হলে ভালো হয়। নতুবা শ্রীমঙ্গল থেকে পরিচিত
কাউকে নিয়ে যেতে পারেন। সবশেষে যদি সময় পান
তাহলে দেখে আসতে পারেন মাগুরছড়া গ্যাসকূপ।
দেখতে পারেন ১৯৯৭ সালের কূপ বিস্ফোরনে সৃষ্ট
অগ্নিকান্ডে পুড়ে যাওয়া বৃ সেখানে এখানো কালের
স্বাী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটি লাউয়াছড়া ফরেস্ট মুখ
থেকে ভানুগাছের দিকে পাকা সড়কে ২
কিলো অন্তরে রয়েছে।
কিভাবে ফিরবেন?
............................
শ্রীমঙ্গল থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে করে অথবা বাস
যোগে চট্টগ্রাম-ঢাকা পৌঁছাতে হবে। চট্টগ্রামের জন্য
রয়েছে প্রতি শুক্রবার ছাড়া দুপুর ১২টায় পাহাড়িকা, রাত
সাড়ে ১১ টায় উদয়ন সহ দিনে-রাতে আরো দু’টি লোকাল
ট্রেন। ঢাকার জন্য রয়েছে সকাল সাড়ে ১০টায় জয়ন্তিকা, ৫টায়
পারাবত ও রাত ১২টায় উপবন সহ আরো দু’টি লোকাল ট্রেন।
ট্রেনে শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকা পৌছাতে ৫/৬ ঘন্টার সময়
লাগবে। কিন্তু বাসে সময় লাগে সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা।
আপনি যদি বাসে যেতে চান তাহলে সিলেট উত্তরবঙ্গ, সিলেট
দণিবঙ্গ, সিলেট কলকাতা, সিলেট
আগরতলা যাতায়াতকারী পরিবহণ-এ আসতে পারেন।