Showing posts with label দেশ-বিদেশ. Show all posts
Showing posts with label দেশ-বিদেশ. Show all posts

Saturday, 26 September 2015

গ্রেট বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ড-এর ইতিহাস (History of Grate Britain & Ireland)

আমরা যখন ফ্রান্স বলি, তখন ফ্রান্সকেই বোঝাই। একই ভাবে যখন জার্মানী বলি তখন জার্মানীকে এবং
সুইডেন বললে সুইডেনকে। কিন্তু আমরা যখন UK তথা ইউনাইটেড কিংডম বলি তখন কাকে বোঝাই?


ইরাক যুদ্ধে বৃটেনের সৈন্য পাঠানো নিয়ে অনেক
চায়ের কাপে ঝড় তোলা হয়েছে; তাহলে প্রশ্ন হলো
বৃটেনই বা কারা? ডলার-পাউন্ডের কনভার্সনের
ওয়েব পেইজে গেলে লেখা দেখি GBP অর্থাৎ গ্রেট
বৃটেন পাউন্ড। তাহলে এই গ্রেট বৃটেনটাই বা কোথা
থেকে এলো? প্রশ্নগুলো আরো জটিল হয়ে যায় যখন
দেখি ইংল্যান্ড বলে একটা দল ফুটবল খেলে অথচ
তাদের কখনো রাজনীতির মঞ্চে দেখা যায় না।
ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ডের নাম শুনলেতো
মাথা আরো ঘোরে - ই.সি.বি এর পূর্নাঙ্গ অর্থ
ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড! ওয়েলসটাই
বা কোথা থেকে আসলো? স্কটল্যান্ড বলেওতো
একটা দেশ আছে, বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দেখা
গিয়েছে তাদের কয়েকবার। ঐদেশে যেতে চাইলে
কোন এ্যাম্বেসিতে ভিসার জন্য দাড়াতে হবে?


প্রশ্নগুলো একেবারে চরম জট পাকিয়ে যায় যখন
দেখা যায় ফুটবলে দুইটা আয়ারল্যান্ড - নর্দার্ন
আয়ারল্যান্ড এবং রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড অথচ
ক্রিকেট, হকি বা রাগবীতে একটা দল -
আয়ারল্যান্ড। যারা ইয়াহু ব্যবহার করেন তারা
দেখতে পান UK এর পেইজটায় গেলে লেখা ওঠে UK
and Ireland। স্বাভাবিক ভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে
কেন?


উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর আপাত দৃষ্টিতে হয়তো
বিচ্ছিন্ন মনে হচ্ছে, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এরা একই
সূত্রে গাঁথা। গ্রেট বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ড এর গত
এক হাজার বছরের ইতিহাসই পারে এই প্রশ্নগুলোকে
সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করতে।


আদি অবস্থা - গ্রেট বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ড
ইউরোপের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে দুটো দ্বীপ রয়েছে -
গ্রেট বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ড। কয়েক হাজার বছর
আগের ঘটনা, তখনও রাষ্ট্র ধারনার প্রসার ঘটেনি
বরং রাজ্য ব্যবস্থাই ছিল রাজনীতির সর্বোচ্চ
পর্যায়। সে সময় গ্রেট বৃটেন দ্বীপে তিনটি রাজ্য
ছিল - ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলস।


ইংল্যান্ড বিভিন্ন বংশের রাজা ও রানীদ্বারা
শাসিত হয়ে আসছে আজও তবে পদবীর মৌলিক
পরিবর্তন হয়েছে দুইবার (পরে ব্যাখ্যা করা হবে)।
স্কটল্যান্ড কয়েকবার স্বাধীনতা হারালেও ১৭০৭ সন
পর্যন্ত কম বেশি স্কটিশ রাজাদের দ্বারা শাসিত
হয়ে এসেছে। অপর দিকে ওয়েলস ১২৮২ সন পর্যন্ত
বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পার হয়ে নিজস্ব
শাসকদ্বারা শাসিত হয়ে এসেছে তবে ইংল্যান্ড
বা স্কটল্যান্ড এর মত এতটা ঐক্যবদ্ধ তারা কখনই
ছিল না।


অপর দিকে আয়ারল্যান্ড দ্বীপ জুড়ে ছিল একটি
রাজ্য আয়ারল্যান্ড। ১১৯৮ সন পর্যন্ত এই রাজ্যটি একক
রাজার শাসনে ছিল যাদের বলা হতো হাই কিং অব
আয়ারল্যান্ড কিন্তু পরবর্তিতে ছোট ছোট রাজার
অধীনে বিচ্ছিন্ন ভাবে দ্বীপটি শাসিত হয়েছে
১৫৪১ সন পর্যন্ত।


ইংল্যান্ড কতৃক স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলস আক্রমন
বরাবরই গ্রেট বৃটেন দ্বীপের সবচেয়ে শক্তিশালী
রাষ্ট্র ছিল ইংল্যান্ড। রাজা প্রথম এডওয়ার্ড-এর
সময় ইংল্যান্ড এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে যে পুরো
গ্রেট বৃটেনকেই নিজেদের দখলে আনার চেষ্টায়
লিপ্ত হয়। এ সময় ইংল্যান্ড ওয়েলস দখল করে এবং
স্কটল্যান্ডকে প্রায় দখল করে ফেলার মত অবস্থায়
চলে যায় যদিও পরে প্রথম এডওয়ার্ড-এর মৃত্তুর পর আর
সেটা সম্ভব হয়নি।


১২৮২ সনে ওয়েলসের সর্বশেষ শাসক লিওয়েলিন দ্যা
লাস্টকে পরাজীত ও হত্যা করে এডওয়ার্ডের ইংরেজ
বাহিনী ওয়েলস দখল করে। ওয়েলস বিজয়ের পর
এডওয়ার্ড তার ছেলের সম্মানে প্রিন্স অব ওয়েলস
উপাধীটি প্রদান করে। সেই থেকে আজও
যুক্তরাজ্যের রাজা বা রানীর বড় ছেলেকে প্রিন্স
অব ওয়েলস বলা হয়।


অপর দিকে ১২৯৬ সনে ইংল্যান্ড প্রথম স্কটল্যান্ড
আক্রমন করে। যদিও প্রথমদিকে স্কটিশ বীর
উইলিয়াম ওয়ালেস-এর প্রতিরোধে ইংল্যান্ড থমকে
যাচ্ছিল তবে পরবর্তিতে ওয়ালেসকে নিষ্ঠুর ভাবে
হত্যা করে তারা স্কটল্যান্ড দখলের কাছাকাছি
চলে যায়। মেলগিবসন অভিনীত জনপ্রিয় চলচিত্র
ব্রেভ হার্ট ওয়ালেসরই জীবনের উপর নির্মিত।
কিন্তু ওয়ালেসের মৃত্ত্বুর পর রাজা রবার্ট ব্রুস-এর
স্কটিশ বাহিনী আবারও সংঘটিত হয় এবং রাজা
এডওয়ার্ডের মৃত্ত্বুর পর তার ছেলের ব্যর্থতাকে
কাজে লাগিয়ে স্কটিশরা ইংরেজদের পরাজীত
করে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখে। ব্রুসের
মৃত্ত্বুর পর ১৩৩২ সন থেকে ১৩৫৭ সন পর্যন্ত আবার
ইংরেজরা স্কটল্যান্ড দখলের চেষ্টা চালায় যদিও
সেবারও তারা পরাজীত হয়।


১৫৪১ - কিংডম অব আয়ারল্যান্ড গঠন:
আয়রল্যান্ডকে কখনও ব্যপকভাবে সামরিক শক্তি
দিয়ে আক্রমন না করলেও ইংল্যান্ড রাজত্বের একটি
চাপ সব সময়ই আয়ারল্যান্ডের উপর ছিল। এ কারনেই
১৫৪১ সনে আইরিশ পার্লামেন্ট (রাজত্ব থাকলেও
দেশগুলোতে পার্লামেন্ট সক্রিয় ছিল) ক্রাউন অব
আয়ারল্যান্ড এ্যাক্ট ১৫৪২ পাশের মধ্য দিয়ে কিংডম
অব আয়ারল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করে এবং নির্ধারিত হয়
যে ইংল্যান্ডের রাজা বা রানীই হবেন
আয়ারল্যান্ডের রাজা বা রানী। শাসন ব্যবস্থার
এই ধরনটাকে পার্সোনাল ইউনিয়নও বলা হয়। এ
ক্ষেত্রে শাসক এক হলেও রাজ্য দুটো আলাদা ভাবে
স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র ছিল। রাজা অষ্টম হেনরী
ছিল প্রথম কিং অব আয়ারল্যান্ড। একারনেই হেনরী
সহ পরবর্তি রাজাদের দুটো করে পদবী ছিল - কিং
অব ইংল্যান্ড এবং কিং অব আয়ারল্যান্ড। (উদাহরন
- রাজা চতুর্থ এডওয়ার্ড, প্রথম মেরী, রানী প্রথম
এলিজাবেথ ইত্যাদি।)


১৫৪২ - ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস গঠন:
১৫৩৫ সন থেকে ১৫৪২ সন পর্যন্ত ইংলিশ পার্লামেন্ট
ল'স ইন ওয়েলস এ্যাক্টস ১৫৩৫-১৫৪২ পাশের মধ্যদিয়ে
ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসকে একিভূত করে ইংল্যান্ড
এন্ড ওয়েলস গঠন করে। এই ব্যবস্থায় ওয়েলসের আর
কোন আইন ব্যবস্থা থাকলো না এবং তারা ইংলিশ
আইনের আওতাভুক্ত হয়। তাদের কোন পার্লামেন্ট
বলেও কিছু থাকলো না (১৯৯৯ সন পর্যন্ত। পরে
ব্যাখ্যা রয়েছে)। সেই থেকে অনেক কিছুতেই ওয়েলস
ইংল্যান্ডের অংশ হিসেবে অংশ নেয় এবং
ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড-ও এরই একটা
উদাহরন।


১৭০৭ - কিংডম অব গ্রেট বৃটেন গঠন:
রানী প্রথম এলিজাবেথ-এর মৃত্ত্বুর পর ইংল্যান্ডের
রাজবংশের কোন উত্তরাধিকারী ছিল না কেননা
রানী এলিজাবেথ কুমারী ছিলেন। ফলে ইংল্যান্ড
এবং আয়ারল্যান্ড রাজ্য আক্ষরিক অর্থেই এক
সংকটে পতিত হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে ১৫০৩ সনে
স্কটল্যান্ডের রাজা চতুর্থ জেমস ইংল্যান্ডের
রাজা সপ্তম হেনরীর কন্যা মারগারেটকে বিয়ে
করেছিলেন। কাকতালীয় ভাবে ঠিক একশ বছর পর এই
সম্পর্কের সূত্র ধরে ১৬০৩ সনে স্কটল্যান্ডের রাজা
ষষ্ঠ জেমস ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের
রাজত্বভার গ্রহন করেন এবং সমগ্র গ্রেট ব্রিটেনের
রাজা হন। ঐতিহাসিক ভাবে এ ঘটনাকে ইউনিয়ন অব
ক্রাউন বলা হয়। যদিও তখন পর্যন্ত ইংল্যান্ড এবং
স্কটল্যান্ড দুটো আলাদা রাজ্য হিসেবে পরিচালিত
হচ্ছিল। তাৎপর্যপূর্ন বিষয় হলো কিংডম আব
ইংল্যান্ড, কিংডম অব স্কটল্যান্ড এবং কিংডম অব
আয়ারল্যান্ড স্বাধীন তিনটি রাজ্য হওয়া সত্বেও
তাদের শাসক ছিলেন একই ব্যাক্তি।


১৭০৭ সনে আলাদা ভাবে ইংল্যান্ডের এবং
স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্টে এ্যাক্ট অব ইউনিয়ন ১৭০৭
পাশ করা হয় যার মাধ্যমে কিংডম অব ইংল্যান্ড
এবং কিংডম অব স্কটল্যান্ডকে বিলুপ্ত করে কিংডম
অব গ্রেট বৃটেন গঠন করা হয়। ১ মে ১৭০৭ রানী এ্যান
প্রথম কুইন অব গ্রেট বৃটেনের দায়িত্ব গ্রহন করেন
এবং সেদিন থেকেই ইতিহাসে কিংডম অব গ্রেট
ব্রিটেন শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। একই সাথে সেদিন
থেকেই কিং অব ইংল্যান্ড এবং কিং অব
স্কটল্যান্ড শব্দদুটিও ইতিহাসের পাতা থেকে
বিলুপ্ত হয়ে যায়।


১৮০০ - ইউনাইটেড কিংডম অব গ্রেট বৃটেন এন্ড
আয়ারল্যান্ড গঠন
তখন পর্যন্ত আয়ারল্যান্ড স্বাধীন রাজ্য হিসেবে
পরিচালিত হলেও শাসিত হতো গ্রেট বৃটেনের
রাজার দ্বারাই। ফলে ধীরেধীরে আরেকটি
ইউনিয়নের সম্ভাবনা বেশ জোরালো হয়ে ওঠে।


১৮০০ সনে রাজা তৃতীয় জর্জ-এর সময় গ্রেট ব্রিটেন
এবং আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্টে এ্যাক্ট অব
ইউনিয়ন ১৮০০ পাশ করা হয় এবং পরের বছরই অর্থাৎ
১৮০১ সনে দুটো রাজ্যকে এক করে একটি অভিন্ন রাজ্য
গঠন করা হয় যার নাম ইউনাইটেড কিংডম অব গ্রেট
বৃটেন এন্ড আয়ারল্যান্ড। ১ জানুয়ারী ১৮০১-এ
ইতিহাসে প্রথমবারের মত ইউনাইটেড কিংডম
শব্দটি ওঠে এবং রাজা তৃতীয় জর্জ এই রাজ্যের প্রথম
রাজা হন।


পরবর্তিতে আরো ১২২ বছর এই রাজ্য পৃথিবীর
বিভিন্ন এলাকা শাসন করে ১৯২২ সনে নিজের ঘরে
ভাঙ্গনের মুখে পতিত হয় এবং জন্ম হয় রিপাবলিক
অব আয়রল্যান্ড নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের।
Showing posts with label দেশ-বিদেশ. Show all posts
Showing posts with label দেশ-বিদেশ. Show all posts

Saturday, 26 September 2015

গ্রেট বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ড-এর ইতিহাস (History of Grate Britain & Ireland)

আমরা যখন ফ্রান্স বলি, তখন ফ্রান্সকেই বোঝাই। একই ভাবে যখন জার্মানী বলি তখন জার্মানীকে এবং
সুইডেন বললে সুইডেনকে। কিন্তু আমরা যখন UK তথা ইউনাইটেড কিংডম বলি তখন কাকে বোঝাই?


ইরাক যুদ্ধে বৃটেনের সৈন্য পাঠানো নিয়ে অনেক
চায়ের কাপে ঝড় তোলা হয়েছে; তাহলে প্রশ্ন হলো
বৃটেনই বা কারা? ডলার-পাউন্ডের কনভার্সনের
ওয়েব পেইজে গেলে লেখা দেখি GBP অর্থাৎ গ্রেট
বৃটেন পাউন্ড। তাহলে এই গ্রেট বৃটেনটাই বা কোথা
থেকে এলো? প্রশ্নগুলো আরো জটিল হয়ে যায় যখন
দেখি ইংল্যান্ড বলে একটা দল ফুটবল খেলে অথচ
তাদের কখনো রাজনীতির মঞ্চে দেখা যায় না।
ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ডের নাম শুনলেতো
মাথা আরো ঘোরে - ই.সি.বি এর পূর্নাঙ্গ অর্থ
ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড! ওয়েলসটাই
বা কোথা থেকে আসলো? স্কটল্যান্ড বলেওতো
একটা দেশ আছে, বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দেখা
গিয়েছে তাদের কয়েকবার। ঐদেশে যেতে চাইলে
কোন এ্যাম্বেসিতে ভিসার জন্য দাড়াতে হবে?


প্রশ্নগুলো একেবারে চরম জট পাকিয়ে যায় যখন
দেখা যায় ফুটবলে দুইটা আয়ারল্যান্ড - নর্দার্ন
আয়ারল্যান্ড এবং রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড অথচ
ক্রিকেট, হকি বা রাগবীতে একটা দল -
আয়ারল্যান্ড। যারা ইয়াহু ব্যবহার করেন তারা
দেখতে পান UK এর পেইজটায় গেলে লেখা ওঠে UK
and Ireland। স্বাভাবিক ভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে
কেন?


উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর আপাত দৃষ্টিতে হয়তো
বিচ্ছিন্ন মনে হচ্ছে, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এরা একই
সূত্রে গাঁথা। গ্রেট বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ড এর গত
এক হাজার বছরের ইতিহাসই পারে এই প্রশ্নগুলোকে
সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করতে।


আদি অবস্থা - গ্রেট বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ড
ইউরোপের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে দুটো দ্বীপ রয়েছে -
গ্রেট বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ড। কয়েক হাজার বছর
আগের ঘটনা, তখনও রাষ্ট্র ধারনার প্রসার ঘটেনি
বরং রাজ্য ব্যবস্থাই ছিল রাজনীতির সর্বোচ্চ
পর্যায়। সে সময় গ্রেট বৃটেন দ্বীপে তিনটি রাজ্য
ছিল - ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলস।


ইংল্যান্ড বিভিন্ন বংশের রাজা ও রানীদ্বারা
শাসিত হয়ে আসছে আজও তবে পদবীর মৌলিক
পরিবর্তন হয়েছে দুইবার (পরে ব্যাখ্যা করা হবে)।
স্কটল্যান্ড কয়েকবার স্বাধীনতা হারালেও ১৭০৭ সন
পর্যন্ত কম বেশি স্কটিশ রাজাদের দ্বারা শাসিত
হয়ে এসেছে। অপর দিকে ওয়েলস ১২৮২ সন পর্যন্ত
বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পার হয়ে নিজস্ব
শাসকদ্বারা শাসিত হয়ে এসেছে তবে ইংল্যান্ড
বা স্কটল্যান্ড এর মত এতটা ঐক্যবদ্ধ তারা কখনই
ছিল না।


অপর দিকে আয়ারল্যান্ড দ্বীপ জুড়ে ছিল একটি
রাজ্য আয়ারল্যান্ড। ১১৯৮ সন পর্যন্ত এই রাজ্যটি একক
রাজার শাসনে ছিল যাদের বলা হতো হাই কিং অব
আয়ারল্যান্ড কিন্তু পরবর্তিতে ছোট ছোট রাজার
অধীনে বিচ্ছিন্ন ভাবে দ্বীপটি শাসিত হয়েছে
১৫৪১ সন পর্যন্ত।


ইংল্যান্ড কতৃক স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলস আক্রমন
বরাবরই গ্রেট বৃটেন দ্বীপের সবচেয়ে শক্তিশালী
রাষ্ট্র ছিল ইংল্যান্ড। রাজা প্রথম এডওয়ার্ড-এর
সময় ইংল্যান্ড এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে যে পুরো
গ্রেট বৃটেনকেই নিজেদের দখলে আনার চেষ্টায়
লিপ্ত হয়। এ সময় ইংল্যান্ড ওয়েলস দখল করে এবং
স্কটল্যান্ডকে প্রায় দখল করে ফেলার মত অবস্থায়
চলে যায় যদিও পরে প্রথম এডওয়ার্ড-এর মৃত্তুর পর আর
সেটা সম্ভব হয়নি।


১২৮২ সনে ওয়েলসের সর্বশেষ শাসক লিওয়েলিন দ্যা
লাস্টকে পরাজীত ও হত্যা করে এডওয়ার্ডের ইংরেজ
বাহিনী ওয়েলস দখল করে। ওয়েলস বিজয়ের পর
এডওয়ার্ড তার ছেলের সম্মানে প্রিন্স অব ওয়েলস
উপাধীটি প্রদান করে। সেই থেকে আজও
যুক্তরাজ্যের রাজা বা রানীর বড় ছেলেকে প্রিন্স
অব ওয়েলস বলা হয়।


অপর দিকে ১২৯৬ সনে ইংল্যান্ড প্রথম স্কটল্যান্ড
আক্রমন করে। যদিও প্রথমদিকে স্কটিশ বীর
উইলিয়াম ওয়ালেস-এর প্রতিরোধে ইংল্যান্ড থমকে
যাচ্ছিল তবে পরবর্তিতে ওয়ালেসকে নিষ্ঠুর ভাবে
হত্যা করে তারা স্কটল্যান্ড দখলের কাছাকাছি
চলে যায়। মেলগিবসন অভিনীত জনপ্রিয় চলচিত্র
ব্রেভ হার্ট ওয়ালেসরই জীবনের উপর নির্মিত।
কিন্তু ওয়ালেসের মৃত্ত্বুর পর রাজা রবার্ট ব্রুস-এর
স্কটিশ বাহিনী আবারও সংঘটিত হয় এবং রাজা
এডওয়ার্ডের মৃত্ত্বুর পর তার ছেলের ব্যর্থতাকে
কাজে লাগিয়ে স্কটিশরা ইংরেজদের পরাজীত
করে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখে। ব্রুসের
মৃত্ত্বুর পর ১৩৩২ সন থেকে ১৩৫৭ সন পর্যন্ত আবার
ইংরেজরা স্কটল্যান্ড দখলের চেষ্টা চালায় যদিও
সেবারও তারা পরাজীত হয়।


১৫৪১ - কিংডম অব আয়ারল্যান্ড গঠন:
আয়রল্যান্ডকে কখনও ব্যপকভাবে সামরিক শক্তি
দিয়ে আক্রমন না করলেও ইংল্যান্ড রাজত্বের একটি
চাপ সব সময়ই আয়ারল্যান্ডের উপর ছিল। এ কারনেই
১৫৪১ সনে আইরিশ পার্লামেন্ট (রাজত্ব থাকলেও
দেশগুলোতে পার্লামেন্ট সক্রিয় ছিল) ক্রাউন অব
আয়ারল্যান্ড এ্যাক্ট ১৫৪২ পাশের মধ্য দিয়ে কিংডম
অব আয়ারল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করে এবং নির্ধারিত হয়
যে ইংল্যান্ডের রাজা বা রানীই হবেন
আয়ারল্যান্ডের রাজা বা রানী। শাসন ব্যবস্থার
এই ধরনটাকে পার্সোনাল ইউনিয়নও বলা হয়। এ
ক্ষেত্রে শাসক এক হলেও রাজ্য দুটো আলাদা ভাবে
স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র ছিল। রাজা অষ্টম হেনরী
ছিল প্রথম কিং অব আয়ারল্যান্ড। একারনেই হেনরী
সহ পরবর্তি রাজাদের দুটো করে পদবী ছিল - কিং
অব ইংল্যান্ড এবং কিং অব আয়ারল্যান্ড। (উদাহরন
- রাজা চতুর্থ এডওয়ার্ড, প্রথম মেরী, রানী প্রথম
এলিজাবেথ ইত্যাদি।)


১৫৪২ - ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস গঠন:
১৫৩৫ সন থেকে ১৫৪২ সন পর্যন্ত ইংলিশ পার্লামেন্ট
ল'স ইন ওয়েলস এ্যাক্টস ১৫৩৫-১৫৪২ পাশের মধ্যদিয়ে
ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসকে একিভূত করে ইংল্যান্ড
এন্ড ওয়েলস গঠন করে। এই ব্যবস্থায় ওয়েলসের আর
কোন আইন ব্যবস্থা থাকলো না এবং তারা ইংলিশ
আইনের আওতাভুক্ত হয়। তাদের কোন পার্লামেন্ট
বলেও কিছু থাকলো না (১৯৯৯ সন পর্যন্ত। পরে
ব্যাখ্যা রয়েছে)। সেই থেকে অনেক কিছুতেই ওয়েলস
ইংল্যান্ডের অংশ হিসেবে অংশ নেয় এবং
ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড-ও এরই একটা
উদাহরন।


১৭০৭ - কিংডম অব গ্রেট বৃটেন গঠন:
রানী প্রথম এলিজাবেথ-এর মৃত্ত্বুর পর ইংল্যান্ডের
রাজবংশের কোন উত্তরাধিকারী ছিল না কেননা
রানী এলিজাবেথ কুমারী ছিলেন। ফলে ইংল্যান্ড
এবং আয়ারল্যান্ড রাজ্য আক্ষরিক অর্থেই এক
সংকটে পতিত হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে ১৫০৩ সনে
স্কটল্যান্ডের রাজা চতুর্থ জেমস ইংল্যান্ডের
রাজা সপ্তম হেনরীর কন্যা মারগারেটকে বিয়ে
করেছিলেন। কাকতালীয় ভাবে ঠিক একশ বছর পর এই
সম্পর্কের সূত্র ধরে ১৬০৩ সনে স্কটল্যান্ডের রাজা
ষষ্ঠ জেমস ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের
রাজত্বভার গ্রহন করেন এবং সমগ্র গ্রেট ব্রিটেনের
রাজা হন। ঐতিহাসিক ভাবে এ ঘটনাকে ইউনিয়ন অব
ক্রাউন বলা হয়। যদিও তখন পর্যন্ত ইংল্যান্ড এবং
স্কটল্যান্ড দুটো আলাদা রাজ্য হিসেবে পরিচালিত
হচ্ছিল। তাৎপর্যপূর্ন বিষয় হলো কিংডম আব
ইংল্যান্ড, কিংডম অব স্কটল্যান্ড এবং কিংডম অব
আয়ারল্যান্ড স্বাধীন তিনটি রাজ্য হওয়া সত্বেও
তাদের শাসক ছিলেন একই ব্যাক্তি।


১৭০৭ সনে আলাদা ভাবে ইংল্যান্ডের এবং
স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্টে এ্যাক্ট অব ইউনিয়ন ১৭০৭
পাশ করা হয় যার মাধ্যমে কিংডম অব ইংল্যান্ড
এবং কিংডম অব স্কটল্যান্ডকে বিলুপ্ত করে কিংডম
অব গ্রেট বৃটেন গঠন করা হয়। ১ মে ১৭০৭ রানী এ্যান
প্রথম কুইন অব গ্রেট বৃটেনের দায়িত্ব গ্রহন করেন
এবং সেদিন থেকেই ইতিহাসে কিংডম অব গ্রেট
ব্রিটেন শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। একই সাথে সেদিন
থেকেই কিং অব ইংল্যান্ড এবং কিং অব
স্কটল্যান্ড শব্দদুটিও ইতিহাসের পাতা থেকে
বিলুপ্ত হয়ে যায়।


১৮০০ - ইউনাইটেড কিংডম অব গ্রেট বৃটেন এন্ড
আয়ারল্যান্ড গঠন
তখন পর্যন্ত আয়ারল্যান্ড স্বাধীন রাজ্য হিসেবে
পরিচালিত হলেও শাসিত হতো গ্রেট বৃটেনের
রাজার দ্বারাই। ফলে ধীরেধীরে আরেকটি
ইউনিয়নের সম্ভাবনা বেশ জোরালো হয়ে ওঠে।


১৮০০ সনে রাজা তৃতীয় জর্জ-এর সময় গ্রেট ব্রিটেন
এবং আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্টে এ্যাক্ট অব
ইউনিয়ন ১৮০০ পাশ করা হয় এবং পরের বছরই অর্থাৎ
১৮০১ সনে দুটো রাজ্যকে এক করে একটি অভিন্ন রাজ্য
গঠন করা হয় যার নাম ইউনাইটেড কিংডম অব গ্রেট
বৃটেন এন্ড আয়ারল্যান্ড। ১ জানুয়ারী ১৮০১-এ
ইতিহাসে প্রথমবারের মত ইউনাইটেড কিংডম
শব্দটি ওঠে এবং রাজা তৃতীয় জর্জ এই রাজ্যের প্রথম
রাজা হন।


পরবর্তিতে আরো ১২২ বছর এই রাজ্য পৃথিবীর
বিভিন্ন এলাকা শাসন করে ১৯২২ সনে নিজের ঘরে
ভাঙ্গনের মুখে পতিত হয় এবং জন্ম হয় রিপাবলিক
অব আয়রল্যান্ড নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের।