উচ্চারণ কি হবে, এইচ নাকি হেইচ?এ নিয়ে বন্ধুরা প্রায় আলোচনা ও বিতর্কে জরিয়ে পড়ি। তাই ইন্টারনেট এ সার্চ দিলাম,রিজাল্ট ও পেলাম বেশ।অবশেষে অনুসন্ধানকৃত একটি নিবন্ধ আপনাদের সাথে হুবহু তুলে ধরলাম :
★এইচ থেকে হেইচ – ভাষার বিবর্তন
লিখেছেন :নিয়াজ মোর্শেদ
আমি ইংরেজী H-কে “হেইচ” উচ্চারণ করি। এতে
আমার ছোট বোনের ব্যাপক আপত্তি। তার ভাষায়
এটা নাকি স্কটল্যান্ডের মানুষরা যারা একটু “নীচু
প্রকৃতি”র, তারা উচ্চারণ করে থাকে। “স্ট্যান্ডার্ড
ইংরেজী” অনুসারে এটা ভুল। তার কোন এক
প্রফেসারকে নাকি একজন “খাঁটি” আইরিশ
ভাষাবিদ “হেইচ” উচ্চারণ করতে মানা করেছে।
আমার ছোট বোনের এই মন্তব্যের জবাবে সাড়ে সাত
ঘণ্টা গবেষণা করে এবং কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
দিয়ে নিচের পোস্টটা তৈরি করলাম।
“হেইচ” বিষয়ে আমার মনে হচ্ছে অনেকের ভুল ধারণা
রয়েছে। আমি ভাষাবিদ নই, তাই ভাষার খুঁটিনাটী
আমি ভালো জানি না। তবে ইতিহাস এবং
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বিষয়টাকে ব্যাখ্যা
করার চেষ্টা করবো এখানে।
প্রথমেই একটা বিষয় নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন মনে
করছি। বাংলাদেশে থাকতেও আমি বেশ কয়েকবার
এই বিষয়টি শুনেছি। স্কটল্যান্ডের মানুষরা নাকি
নীচু বা “গাইয়া” প্রকৃতির। এটা মূলতঃ ভাষার কথা
প্রসঙ্গে অনেকে বলে থাকেন যখন ইংরেজীর
তথাকথিত স্ট্যান্ডার্ড-এর সাথে ডাইল্যাক্টগুলোর
তুলনা হয়। কিন্তু বিষয়টা সম্পূর্ণ ভুল। স্কটল্যান্ডের
মানুষ “স্কটিশ ইংলিশ”-এ কথা বলে। এখানে নীচু
বা গ্রাম্য বা অশিক্ষিত হবার কিছু নেই। শিক্ষিত-
অশিক্ষিত, ধনী-গরীব নির্বিশেষে তারা এই
ভাষাতেই কথা বলে। তাছাড়া একটা ভাষাকে
কিসের উপর ভিত্তি করে স্ট্যার্ন্ডাডাইজড করা
হবে? ইংল্যান্ডের মানুষ যে ভাষায় কথা বলে
সেটাই স্ট্যান্ডার্ড ইংলিশ? আর অন্য সব নীচু
প্রকৃতির? তাহলেতো এ্যামেরিকার মানুষ সব
“গাইয়া”। বর্তমান যুগে সেটা কেউ বলতে সাহস
করবে না কেননা এ্যামেরিকার অর্থনীতি
ইংল্যান্ডের থেকে শক্তিশালী। তাই এখন বলা হবে
ওটা “এ্যামেরিকান ইংলিশ”, ওটাও একটা
স্ট্যান্ডার্ড। তাহলে স্কটিশ ইংলিশকে
স্ট্যান্ডার্ড ইংলিশগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃতি
দিতে সমস্যা কোথায়?
এবার আসা যাক হেইচ প্রসঙ্গে। হেইচ স্কটিশ
ইংলিশ থেকে আসে নি, এসেছে হাইবার্নো
ইংলিশ থেকে। তবে স্কটরাও হেইচ বলে যার কারণ
ইতিহাসে লুকানো। শুরুতেই একটু ব্যাখ্যা করে
নিচ্ছি বিষয়টা। “স্কট” শব্দটা ল্যাটিন “স্কটি”
থেকে এসেছে যার সরল ইংরেজী অর্থ “আইরিশ”।
প্রায় দুই হাজার বছর আগে গ্রেট বৃটেন দ্বীপের উপর
এবং নীচের অংশে দুটো গুরুত্বপূর্ণ “মাইগ্রেশন”
ঘটে। এই সময় আয়ারল্যান্ড দ্বীপ থেকে “গেইল”
নামক একটা গোষ্ঠী নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড দিয়ে
গ্রেট বৃটেন দ্বীপে চলে যায় যেখানে তারা স্থায়ী
ভাবে বসতী গড়ে বসবাস করতে শুরু করে। ঐ সময়
বৃটেনের নীচের অংশে রোমান শাসন ছিল যারা এই
মানুষগুলোকে স্কটি বলতো (তবে ইতিহাসে স্কটি
শব্দটার উল্লেখ পঞ্চম শতকের আগে দেখা যায় নি)।
পরবর্তীতে কালক্রমে স্কটদের দেশ হিসেবে ঐ
এলাকার নাম হয় স্কটল্যান্ড। উল্লেখ্য যে
আয়ারল্যান্ড থেকে যাবার সময় গেইলরা তাদের
সংস্কৃতি এবং ভাষা (“গেইলিক”) নিয়ে গিয়েছিল
যার কারণে স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের
সংস্কৃতির এত সাদৃশ্য। আরেকটা মজার ব্যাপার
হচ্ছে, বৃটেনে রোমান শাসন কালে তারা কখনই
স্কটদের হারাতে পারে নি। ফলে রোমান সম্রাট
হেডরিয়ানের সময় ১২২ সনে বৃটেনের মাঝ দিয়ে
বর্তমান যুগের হিসেবে ১১৭ কিলোমিটার একটা
দেয়াল তুলে স্কটদের আলাদা করে দেয়া হয় যাতে
তারা নীচের দিকে আসতে না পারে। শুধু দেয়াল
দিয়েই তারা ক্ষান্ত হয় নি। এই দেয়ালের ঠিক
পেছনেই ছিল রোমান সেনা ব্যারাক যারা
সার্বক্ষণিক নজর রাখতো সীমানায়। উল্লেখ্য যে এই
দেয়াল কালের সাক্ষি হয়ে আজও টিকে আছে। তবে
ইংল্যান্ডের বর্তমান সীমা আরো সামনে সরে
যাওয়াতে এই দেয়াল আধুনিক ইংল্যান্ডের মধ্যে
পড়েছে, ইংল্যান্ড-স্কটল্যান্ড সীমানায় নয়।
লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে এই দেয়ালের একটা
মিনিয়েচার রয়েছে যা গতবছর লন্ডন ভ্রমনের সময়
দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল।
এবার দৃষ্টি ফেরাচ্ছি ইংল্যান্ডের দিকে। রোমান
শাসনের কারণে বৃটেনের নিচের অংশে ব্যাপক
উন্নতি হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রোমানদের তৈরি
করা একটা নগর যার নাম “লন্ডন”। কালের ঘড়ি যখন
এগিয়ে চলছিল, তখন পঞ্চম শতকের দিকে রোমান-
জার্মান থেকে “এংলো-স্যাক্সোন” নামক একটা
গোষ্ঠী গ্রেট বৃটেন দ্বীপের নীচের অংশে এসে
বসবাস করতে শুরু করে। তাদের ভাষার নাম ছিল
“এ্যাংলিশ” যেখান থেকে বর্তমান ইংলিশ এসেছে
এবং তাদের নামানুসারে ঐ এলাকার নাম হয়
ইংল্যান্ড, তবে সেটা আরো অনেক পরে। ষষ্ঠ শতকে
কিং আর্থার তাদের পরাজিত করে
(রিকোম্যান্ডেড মুভি - কিং আর্থার) বৃটনদের পক্ষ
থেকে শাসন প্রতিষ্ঠা করে। আরো পরে ৭৪৭ সনের
দিকে কিং অব মার্সিয়া ওফ্ফা আংশিক ভাবে
কিং অব এ্যাংলেস হয়। তাকেই ইংল্যান্ডের প্রথম
রাজা হিসেবে ধরা হয়। তবে ১০৬৬ সনে ফ্রান্স
থেকে আসা নর্মানরা বর্তমান ইংল্যান্ড এলাকা
দখল করে নেয় এবং এর পর থেকেই মূলতঃ
শক্তিশালী রাজ্য হিসেবে ইতিহাসে ইংল্যান্ডের
পাদচারণা শুরু হয়। উল্লেখ্য যে নর্মান জাতি
এসেছে ফ্রান্স থেকে তবে তাদের আদি জাতি
“ভাইকিং” এসেছে স্ক্যান্ডেনেভিয়া থেকে।
এজন্যে ইংরেজী ভাষায় এই সব এলাকার শব্দের
কোন না কোন ভাবে প্রবেশ রয়েছে। তবে নর্মানরা
দখল করে নেয়ার পর থেকে ইংরেজী শব্দে রোমান
শব্দের প্রভাব কমতে শুরু করে এবং ফ্রেন্স শব্দ
বাড়তে থাকে ব্যাপক ভাবে।
যাইহোক, ইংল্যান্ড যখন গড়ে উঠছিল, তখন
স্কটল্যান্ড বসে ছিল না। ধীরেধীরে ঐক্যবদ্ধ হওয়া
স্কটরা ৮৪৩ সনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল “কিংডম অব
স্কটল্যান্ড”। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের পাশেই
বৃটেনের একটা কোনায় গড়ে উঠেছিল আরেকটি
রাজ্য। এই রাজ্যের নাম ওয়েলস (ষষ্ঠ শতকে কিং
আর্থারের রাজ্য মূলতঃ বর্তমান ওয়েলস এর
সীমানায় ছিল)। তবে ওয়েলসকে কিংডম বলা হতো
না বরং বলা হতো “প্রিন্সিপালিটি” এবং এর
শাসককে বলা হতো “প্রিন্স”। আর বৃটেনের পাশের
দ্বীপ আয়ারল্যান্ডে তখন অনেকগুলো রাজ্য ছোট
ছোট ভাগে বিভক্ত হয়ে শাসন করছিল। নর্মানরা
ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড – এই তিন
এলাকাকে দখল করার জন্য মরিয়া হয়ে ছিল যদিও
সেটা সফল করতে আরো দুইশ বছর অপেক্ষা করতে
হয়েছিল। ইংল্যান্ডের রাজা এ্যাডওয়ার্ড (যাকে
লংশ্যাংস বলা হতো) ছিল নিশ্ঠুরতম শক্তিশালী
রাজা। তার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল চারটা রাজ্যকে
এক করে একটা রাজ্য বানানোর। সেই উদ্দেশ্যে সে
একের পর এক আক্রমণ করে চলেছিল ওয়েলস,
আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড। প্রথম দুটোতে সফল
হলেও প্রায় দখল করে বসা স্কটল্যান্ডকে শেষ
পর্যন্ত ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল এ্যাডওয়ার্ড দুইজন
মহানায়কের কারণে - প্রথমে উইলিয়াম ওয়ালেস
এবং পরে রবার্ট ব্রুস দ্যা গ্রেট (রিকোম্যান্ডেড
মুভি - ব্রেভ হার্ট) বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে তার
থেকেও বড় বাঁধা হয়ে এসেছিল সম্ভবত মৃত্যু। তার
মৃত্যুর পর তার ছেলে দ্বিতীয় এ্যাডওয়ার্ড রবার্ট
ব্রুসের হাতে পরাজিত হয়ে স্কটল্যান্ড ছাড়তে বাধ্য
হয়। এই প্রসঙ্গে স্কটল্যান্ডের সবচেয়ে শক্তিশালী
রাজা রবার্ট ব্রুসের একটা মন্তব্য বেশ মজার। ব্রুস
একবার বলেছিল, “আমি জীবিত দ্বিতীয়
এ্যাডওয়ার্ডকে যতটা পরোয়া করি, তার থেকে
অনেক বেশী পরোয়া করি মৃত প্রথম এ্যাডওয়ার্ডকে”।
যাইহোক, স্কটল্যান্ড দখল করতে না পারলেও অন্য
দুটোতে ভালোই কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল
এ্যাডওয়ার্ড। সে ১২৭৭ সনের ১১ ডিসেম্বর ওয়েলস এর
প্রিন্সকে হত্যা করে ওয়েলস দখল করে নেয়। সেই
থেকে ওয়েলস ইংল্যান্ডের অংশ হিসেবে গণ্য
হচ্ছে। ওয়লেস দখলের পর এ্যাডওয়ার্ড তার ছেলেকে
“প্রিন্স অব ওয়েলস” ঘোষণা করে এবং সেই থেকে
আজও ইংল্যান্ডের রাজা/রানীর বড় ছেলের
টাইটেল প্রিন্স অব ওয়েলস। সরল ভাষায় বললে বলা
যায় এটা একটা লুণ্ঠিত টাইটেল। যাইহোক, ওয়লেস
দখলের পর প্রথম যে কাজটা ইংরেজরা করে সেটা
তাদের ভাষাকে “পুশ” করা যার ফলে ওয়েলসের
নিজের ভাষা “ওয়েলশ” ধীরেধীরে মৃত্যুবরণ করে।
গতবছর ওয়েলস দিয়ে যাবার সময় লক্ষ্য করি তারা
খুব গর্বের সাথে জানাচ্ছে তারা একটা
বাইলিঙ্গুয়াল দেশ। ২০০৫ সনে ওয়েলস এর রাষ্ট্রিয়
অস্তিত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর তাদের অন্যতম লক্ষ্য
হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের ভাষাকে বাঁচিয়ে তোলা।
উল্লেখ্য যে ওয়েলস-এর ইংলিশ ডাইলেক্টটা
ইংরেজী এবং ওয়লেশ ভাষার মিশ্রণে তৈরি। এতে
“গেয়ো”, “অশিক্ষিত” বা “নীচু” শ্রেনীর কোন ভেদ-
বিভেদ নেই।
এবার দৃষ্টি ঘোরাচ্ছি আয়ারল্যান্ডের দিকে।
এ্যাডওয়ার্ডের শাসনের প্রায় একশ বছর আগের
ঘটনা। ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় হেনরীর পাঁচ
ছেলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিল জন। মানুষ তাকে
একটা অদ্ভুত নামে ডাকতো – “জন দ্যা
ল্যাকল্যান্ড”। এই নামের কারণ ছিল বাবার
সবচেয়ে ছোট ছেলে হওয়াতে শাসন করার মত জনের
কোন এলাকা ছিল না। ঐ সময় হেনরী পাশের দ্বীপ
আয়ারল্যান্ড এর একটা ক্ষুদ্র এলাকা দখল করতে
সক্ষম হয় যার নাম “ডাবলিন”। ছেলেকে খুশি করার
জন্যে সেই এলাকায় লর্ডশিপ প্রতিষ্ঠা করে জনকে
প্রেরণ করা হয় আয়ারল্যান্ডের প্রথম লর্ড হিসেবে।
শাসক হিসেবে ইংল্যান্ডের রাজ বংশের এটাই
আয়ারল্যান্ডে প্রথম আগমন। এবার যে গল্পটা বলবো
সেটা আমি বেশ কয়েকবার আইরিশ বন্ধুদের থেকে
শুনেছি। জন যখন প্রথম ডাবলিনে আসে তখন তাকে
অভ্যর্থনা জানাতে আইরিশদের পক্ষ থেকে একটা
প্রতিনিধি দল এসেছিল। তাদের পোশাক দেখে জন
তাচ্ছিল্যের সাথে বলেছিল “এই সব ছোটলোক
কোথা থেকে এসেছে”। ফলে আইরিশরা ক্ষিপ্ত হয়ে
অভ্যর্থনা না দিয়েই চলে যায়। এই গল্পের একটা
তাৎপর্য আছে, সেটা হলো - আয়ারল্যান্ডে ইংরেজ
শাসনের প্রথম মুহূর্তেই তারা “এরিস্টোক্রেট” এবং
তথাকথিত নীচু স্তরে ভাগ করে ফেলেছিল এখানকার
মানুষকে। এরই রেশ ধরে পরবর্তীতে ক্ষমতায় থাকা
ইংরেজ এবং তাদের কাছের আইরিশরা নিজেদের
মনে করতো সম্ভ্রান্ত এবং সাধারণ আইরিশদের
মনে করতো নীচু স্তরের। ফলে আয়ারল্যান্ডে তৈরি
হয় দুটো মেরুর। সাধারণ আইরিশরা গেইলিক
উচ্চারণের সাথে মিলিয়ে ইংলিশ বলতে শুরু করে
কিন্তু যারা ইংরেজদের কাছের মানুষ ছিল, সেইসব
আইরিশরা নিজেদের ভাষাকে ছেড়ে পরিপূর্ণ
ইংরেজ হয়ে উঠার চেষ্টা করে। অবিশ্বাস্য হলেও
সত্য, আজ এক হাজার বছর পরও এই বিষয়টা
আয়ারল্যান্ডের একটা অংশে এখনও বিদ্যমান।
যথাসময়ে সেটা বলবো। যাইহোক, আয়ারল্যান্ডের
প্রথম লর্ড জনের ভাগ্য রাতারাতি বদলে যায় তার
বড় চার ভাইয়ের একের পর এক মৃত্যুতে। ফলে বাবার
পঞ্চম সন্তান হওয়ার পরও সে রাজত্ব পেয়ে যায়
এবং আয়ারল্যান্ড ছেড়ে ইংল্যান্ডে গিয়ে কিং অব
ইংল্যান্ড-এর দায়িত্ব ভার গ্রহণ করে। পরবর্তীতে
এই জন ইতিহাসে দারুণ বিখ্যাত (অথবা কুখ্যাত) হয়ে
উঠে যখন তার সাথে যুদ্ধ বাধে রবিন হুড-এর
(রিকোম্যান্ডেড মুভি - রবিন হুড)। তবে সে গল্প
আমাদের অলোচ্য বিষয়বস্তু নয়। ফলে জনের ইতিহাস
এখানেই শেষ করছি।
পরবর্তী একশ বছর ইংরেজ আগ্রাসন চলে
আয়ারল্যান্ডের ভাষার উপর দিয়ে। যখন প্রথম
এ্যাডওয়ার্ড ক্ষমতায় আসে (যার গল্প জনের আগে
বলছিলাম) ততদিনে আইরিশ ভূমিতে ইংরেজরা
বেশ ভালো ঘাঁটি বেঁধে ফেলেছে। এ্যাডওয়ার্ড
সেটাকে আরো উস্কে দেয়। ওয়েলস-এর টুরিজমের
ওয়েব সাইটে পড়েছিলাম, এই সময়টায় ওয়েলস এবং
আয়ারল্যান্ড থেকে বিলুপ্ত হতে শুরু করে তাদের
নিজেদের ভাষা। আর গড়ে উঠতে শুরু করে
হাইবার্নো ইংলিশ। ইংরেজীর এই ডাইল্যাক্টটার
বিশেষত্ব হচ্ছে, এটা গেইলিক উচ্চারণে ইংরেজী
বলে। এই ডাইল্যাক্টের “হাইপারকারেশন”-এর
প্রভাবে এ্যাংলো ইরেজীর বেশ কিছু “নিশ্চুপ
অক্ষর” উচ্চারিত হতে শুরু করে। এর মধ্যে অন্যতম
“আর” এবং “হেইচ”। ইংরেজরা যেখানে R কে
উচ্চারণই করে না (নন-রোটিক এ্যাকসেন্ট) সেখানে
আইরিশ, স্কট এবং ওয়েলশরা (কেলটিক জাতিগুলো)
এটাকে গভীর ভাবে উচ্চারণ করে (রটিক
এ্যাকসেন্ট)। যেমন, ইংল্যান্ডে বলে, “ইউ আ‘ মাই
বা‘দা‘”। আয়ারল্যান্ডে বলে, “ইউ আ‘ঢ় মাই
ব্রাদা‘ঢ়”। এই প্রমিনেন্ট R এর উচ্চারণ এখন ব্রিটিশ
এবং এ্যামেরিকান ইংরেজীর অন্যতম প্রভেদ
সৃষ্টিকারি মানদণ্ড (কীভাবে সেটা হলো, সেটা
আরো পরে ব্যাখ্যা করবো)। এরই মত H-এর উচ্চারণও
সাধারণ আইরিশরা করতে শুরু করে “হেইচ” কেননা
গেইলিকে উচ্চারণটা এমন।
কেটে যেতে থাকে সময়। ষোড়ষ শতকের ঘটনা।
“পার্সোনাল ইউনিয়ান”-এর মাধ্যমে আয়ারল্যান্ড
তখন পুরোপুরি ইংরেজ রাজার দখলে। ১৫৮৩ সনে
স্যার গিলবার্ট আয়ারল্যান্ড থেকে যাত্রা শুরু করে
আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে নিউফাওন্ডল্যান্ডে গিয়ে
পৌঁছান এবং সেই এলাকাকে ইংল্যান্ডের কলোনি
হিসেবে ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য যে নর্থ
আমেরিকায় এটাই প্রথম ইংরেজ কলোনি। এরপর
স্রোতের মত আইরিশরা মাইগ্রেন্ট হতে শুরু করে
নর্থ আমেরিকায়, সাথে নিয়ে যেতে থাকে তাদের
ভাষা। ১৮৪৫ সনে আয়ারল্যান্ডে আলুতে এক বিশেষ
ধরণের ফাঙ্গাস দেখা দেয় যার কারণে আলুর
উৎপাদনে ব্যাপক ধস নামে। যেহেতু আয়ারল্যান্ডে
আলু প্রধান খাদ্য, ফলে এর রেশ ধরে দেখা দেয়
প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষ – যা ইতিহাসে “গ্রেট পটাটো
ফেমিন” নামে পরিচিত। এই সময় আয়ারল্যান্ডের
অর্ধেকেরও বেশী মানুষ (কিছুকিছু এলাকার ৮৫
শতাংশ মানুষ) এ্যামেরিকা, ক্যানাডা এবং
অস্ট্রেলিয়াতে চলে যায়। এই মাইগ্রেশন
এ্যামেরিকার ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা এই
মানুষগুলোই পরবর্তীতে এ্যামেরিকাকে নূতন ভাবে
গড়ে তুলেছিল (রিকোম্যান্ডেড মুভি - গ্যাঙ্স অব
নিউ ইয়র্ক)। এই মাইগ্রেশনের ফলে এ্যামেরিকায়
“রটিক এ্যাকসেন্ট” আরো ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে
পড়ে।
এবার বিংশ শতকের আয়ারল্যান্ডের দিকে
তাকাচ্ছি। এখানে তখন টানটান উত্তেজনা দুটো
শ্রেণীর মধ্যে। একটা দল ক্যাথলিক যারা আইরিশ
জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। আরেকদল
প্রোটেস্টট্যান্ট যারা নিজেদের এ্যাংলো-আইরিশ
ভাবতে পছন্দ করতো। প্রোটেস্টট্যান্টদের মূল ঘাঁটি
ছিল নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড যেখানে ক্যাথলিকরা
ছিল নির্যাতিত, বঞ্চিত এবং গরীব
(রিক্যোমেন্ডেড মুভি - ফিফটি ডেড মেন
ওয়াকিং)। অন্যদিকে প্রোটেস্টট্যান্টরা ছিল
ক্ষমতাধর এবং তথাকথিত উঁচু বর্গের। তারা গেইলিক
ভাষায় কথা প্রায় বলতোই না। নর্দার্ন
আয়ারল্যান্ড সহ আয়ারল্যান্ড-এর প্রায় সব স্থানেই
ক্যাথলিক স্কুলগুলোতে বাচ্চাদের শেখানো হতো
“হেইচ” কিন্তু প্রোটেস্টট্যান্ট স্কুলগুলোতে
শেখানো হতো “এইচ”। প্রোটেস্টট্যান্টরা প্রচার
করতো “হেইচ” বলে নীচু প্রকৃতির স্বল্প শিক্ষিত
মানুষরা আর “এইচ” বলে এরিস্টোক্রেটরা।
পরবর্তীতে ১৯২২ সনে আয়ারল্যান্ড স্বাধীন হলে
৩২টা কাউন্টির মধ্যে ৬টা নিয়ে তারা নর্দার্ন
আয়ারল্যান্ড হিসেবে পুনরায় ইংল্যান্ডের সাথে
যোগ দেয় এবং বাকি ২৬টা কাউন্টি প্রথমে আইরিশ
ফ্রি স্টেট এবং পরে রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড
হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
বর্তমানে রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড-এ স্কুল,
কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় – সব স্থানে “হেইচ” ব্যবহার
করা হয়। এখানে কেউ “এইচ” উচ্চারণ করে না বা
আমরা যদি করি তাহলে তারা ঠিক মত বোঝেও না।
দুটো গল্প বলছি এই প্রসঙ্গে। আমি প্রথম যখন দেশে
টাকা পাঠানোর জন্যে পোস্ট অফিসে যাই, তখন
তারা আমার নামের বানান জিজ্ঞেস করেছিল।
আমি বলেছিলাম, “সি এইচ ও ডব্লিউ…”। যে লোকটা
কাউন্টারে ছিল, সে প্রথমবার বোঝে নি আমি কী
বললাম। ফলে আমি আবার রিপিট করি। কিন্তু
লোকটা এবারও বোঝে না। আমি তৃতীয়বার বলার পর
সে হেসে বললো, “ওহ! হেইচ?”। আরেকটা গল্প
আমাদের ট্রিনিটিরই আরেক বাংলাদেশী ছাত্র
ধ্রুবকে নিয়ে। সে গিয়েছে প্রিন্টার কিনতে।
দোকানে গিয়ে বলেছে, “এইচ পি” দিতে।
সেলসম্যান বোঝে না। বেশ কয়েকবার বলার পর ধ্রুব
যখন “হেইচ পি” বলে তখন সে বুঝেছে। আমার
কাজিনের বন্ধু শিবলী ভাইয়া লন্ডনে থাকেন।
সেখাতে তার একটা অভিজ্ঞতা আছে এ বিষয়ে।
HSBC ব্যাঙ্কে গিয়ে শোনে তারা “হেইচ এস বি
সি” বলে! গতবছর ইংল্যান্ড গিয়ে আমি নিজেও
দেখেছিলাম ওখানেও এখন অনেকেই হেইচ বলে।
আমাদের রিসার্চ রুমে আমরা সব সময় “হেইচ টি এম
এল”, “হেইচ টি টি পি” ইত্যাদি বলি। মাঝে মাঝে
হেইচটা অল্প উচ্চারণ করা হয় যখন সংক্ষেপণের
মাঝে থাকে - যেমন পি.হেইচ.ডি বলা হলে অনেক
সময় “পি.এইচ.ডি”-ও শোনায়। ২০০৭ সন থেকে আমার
মধ্যে এই বিষয়টা এমন ভাবে ছড়িয়েছে যে আমি
চাইলেও এখন আর “এইচ” উচ্চারণ করতে পারি না
কথার মধ্যে। কাল হঠাৎ করে মনে হলো “এইচ পি”
শব্দটা যেন আমি জীবনও শুনি নি, এতটাই অচেনা
লাগছিল। আসলে এটা গ্রহণ করা বা বর্জন করার
বিষয় নয়। এটা পরিবেশে থাকলে আপনাআপনি ঢুকে
যাবে। হয়তো আয়ারল্যান্ড ছেড়ে অন্য দেশে গেলো
আবার আমি “এইচ”-কে স্বাভাবিক ভাবে নিতে
পারবো।
এবার স্ট্যান্ডার্ড-এর বিষয়ে আবার একটু ফিরে
আসি। আমাদের মনে রাখতে হবে ভাষা মানুষের মুখ
থেকে ভাষাবিদের টেবিলে যায়, ভাষাবিদের
টেবিল থেকে মানুষের মুখে আসে না। আজ আমরা
যে বাংলা ভাষায় কথা বলছি এটা কিন্তু নদীয়ার
ডাইলেক্ট। রবি ঠাকুর প্রথম দিকে এর ব্যাপক
বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু আজ এটাই
স্ট্যান্ডার্ড কারণ সবচেয়ে বেশী মানুষ এই
ডাইলেক্টে কথা বলে। আজ যদি নোয়াখালির
ভাষায় সবাই কথা বলতো তাহলে সেটাই
স্ট্যান্ডার্ড হতো! একেকটা ডাইলেক্ট ধীরেধীরে
স্ট্যান্ডার্ড হয়। আজ এ্যামেরিকান ডাইলেক্টকেও
স্ট্যান্ডার্ড বলা হয়। অথচ প্রায় চার শ বছর আগে
তারাই ছিল “নীচু” এবং
“অশিক্ষিত” (রিকোম্যান্ডেড মুভি - দ্যা
পেট্রিয়ট)। উইকিপিডিয়াতে “হেইচ” আর্টিকেলটা
আমি গত দুই বছর ফলো করছি। ওখানে না না বিতর্ক
হচ্ছে। আর এই বিতর্কের মাধ্যমে যে জিনিসটা
বুঝতে পেরেছি সেটা হলো “হেইচ” এখন ছড়িয়ে
পড়েছে সারা পৃথিবীতে, আর সেজন্যেই এত বিতর্ক।
সেই আর্টিকেলে স্ট্যান্ডার্ড ইংরেজির পক্ষে যে
রেফারেন্সটা দেয়া হয়েছে সেটা অক্সফোর্ড
ডিকশনারি থেকে নেয়া। ফলে সেখানে ব্যাখাটা
কেমন হবে সহজেই বোধগম্য। এই লিঙ্কটা আরেকটা
ডিকশনারি থেকে নেয়া। এখানে “হেইচ” এর
ব্যাখ্যাটা দেখলে অনেক কিছু পরিষ্কার হবে
আমাদের কাছে।
আমার ছোট বোনের স্যার যে “খাঁটি” আইরিশ-এর
সাথে কথা বলেছিলেন, সেই আইরিশ প্রফেসার কি
ক্যাথলিক ছিলেন নাকি প্রোটেস্টট্যান্ট? এটা
একটা প্রশ্ন বটে। আমি ৯৯ শতাংশ নিশ্চিত তিনি
প্রোটেস্টট্যান্ট ছিলেন। আর সেজন্যই তার
ব্যাখ্যাটা অমন ছিল।
সব শেষে একটাই কথা বলবো, আজ যদি কেলটিক
জাতিগুলো অর্থাৎ আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড বা
ওয়েলস -এর কথা বলি, তাহলে “হেইচ”-ই এখানে
স্ট্যান্ডার্ড। “এইচ” এখানে অব্যবহৃত ডাইলেক্ট!
★এইচ থেকে হেইচ – ভাষার বিবর্তন
লিখেছেন :নিয়াজ মোর্শেদ
আমি ইংরেজী H-কে “হেইচ” উচ্চারণ করি। এতে
আমার ছোট বোনের ব্যাপক আপত্তি। তার ভাষায়
এটা নাকি স্কটল্যান্ডের মানুষরা যারা একটু “নীচু
প্রকৃতি”র, তারা উচ্চারণ করে থাকে। “স্ট্যান্ডার্ড
ইংরেজী” অনুসারে এটা ভুল। তার কোন এক
প্রফেসারকে নাকি একজন “খাঁটি” আইরিশ
ভাষাবিদ “হেইচ” উচ্চারণ করতে মানা করেছে।
আমার ছোট বোনের এই মন্তব্যের জবাবে সাড়ে সাত
ঘণ্টা গবেষণা করে এবং কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
দিয়ে নিচের পোস্টটা তৈরি করলাম।
“হেইচ” বিষয়ে আমার মনে হচ্ছে অনেকের ভুল ধারণা
রয়েছে। আমি ভাষাবিদ নই, তাই ভাষার খুঁটিনাটী
আমি ভালো জানি না। তবে ইতিহাস এবং
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বিষয়টাকে ব্যাখ্যা
করার চেষ্টা করবো এখানে।
প্রথমেই একটা বিষয় নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন মনে
করছি। বাংলাদেশে থাকতেও আমি বেশ কয়েকবার
এই বিষয়টি শুনেছি। স্কটল্যান্ডের মানুষরা নাকি
নীচু বা “গাইয়া” প্রকৃতির। এটা মূলতঃ ভাষার কথা
প্রসঙ্গে অনেকে বলে থাকেন যখন ইংরেজীর
তথাকথিত স্ট্যান্ডার্ড-এর সাথে ডাইল্যাক্টগুলোর
তুলনা হয়। কিন্তু বিষয়টা সম্পূর্ণ ভুল। স্কটল্যান্ডের
মানুষ “স্কটিশ ইংলিশ”-এ কথা বলে। এখানে নীচু
বা গ্রাম্য বা অশিক্ষিত হবার কিছু নেই। শিক্ষিত-
অশিক্ষিত, ধনী-গরীব নির্বিশেষে তারা এই
ভাষাতেই কথা বলে। তাছাড়া একটা ভাষাকে
কিসের উপর ভিত্তি করে স্ট্যার্ন্ডাডাইজড করা
হবে? ইংল্যান্ডের মানুষ যে ভাষায় কথা বলে
সেটাই স্ট্যান্ডার্ড ইংলিশ? আর অন্য সব নীচু
প্রকৃতির? তাহলেতো এ্যামেরিকার মানুষ সব
“গাইয়া”। বর্তমান যুগে সেটা কেউ বলতে সাহস
করবে না কেননা এ্যামেরিকার অর্থনীতি
ইংল্যান্ডের থেকে শক্তিশালী। তাই এখন বলা হবে
ওটা “এ্যামেরিকান ইংলিশ”, ওটাও একটা
স্ট্যান্ডার্ড। তাহলে স্কটিশ ইংলিশকে
স্ট্যান্ডার্ড ইংলিশগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃতি
দিতে সমস্যা কোথায়?
এবার আসা যাক হেইচ প্রসঙ্গে। হেইচ স্কটিশ
ইংলিশ থেকে আসে নি, এসেছে হাইবার্নো
ইংলিশ থেকে। তবে স্কটরাও হেইচ বলে যার কারণ
ইতিহাসে লুকানো। শুরুতেই একটু ব্যাখ্যা করে
নিচ্ছি বিষয়টা। “স্কট” শব্দটা ল্যাটিন “স্কটি”
থেকে এসেছে যার সরল ইংরেজী অর্থ “আইরিশ”।
প্রায় দুই হাজার বছর আগে গ্রেট বৃটেন দ্বীপের উপর
এবং নীচের অংশে দুটো গুরুত্বপূর্ণ “মাইগ্রেশন”
ঘটে। এই সময় আয়ারল্যান্ড দ্বীপ থেকে “গেইল”
নামক একটা গোষ্ঠী নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড দিয়ে
গ্রেট বৃটেন দ্বীপে চলে যায় যেখানে তারা স্থায়ী
ভাবে বসতী গড়ে বসবাস করতে শুরু করে। ঐ সময়
বৃটেনের নীচের অংশে রোমান শাসন ছিল যারা এই
মানুষগুলোকে স্কটি বলতো (তবে ইতিহাসে স্কটি
শব্দটার উল্লেখ পঞ্চম শতকের আগে দেখা যায় নি)।
পরবর্তীতে কালক্রমে স্কটদের দেশ হিসেবে ঐ
এলাকার নাম হয় স্কটল্যান্ড। উল্লেখ্য যে
আয়ারল্যান্ড থেকে যাবার সময় গেইলরা তাদের
সংস্কৃতি এবং ভাষা (“গেইলিক”) নিয়ে গিয়েছিল
যার কারণে স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের
সংস্কৃতির এত সাদৃশ্য। আরেকটা মজার ব্যাপার
হচ্ছে, বৃটেনে রোমান শাসন কালে তারা কখনই
স্কটদের হারাতে পারে নি। ফলে রোমান সম্রাট
হেডরিয়ানের সময় ১২২ সনে বৃটেনের মাঝ দিয়ে
বর্তমান যুগের হিসেবে ১১৭ কিলোমিটার একটা
দেয়াল তুলে স্কটদের আলাদা করে দেয়া হয় যাতে
তারা নীচের দিকে আসতে না পারে। শুধু দেয়াল
দিয়েই তারা ক্ষান্ত হয় নি। এই দেয়ালের ঠিক
পেছনেই ছিল রোমান সেনা ব্যারাক যারা
সার্বক্ষণিক নজর রাখতো সীমানায়। উল্লেখ্য যে এই
দেয়াল কালের সাক্ষি হয়ে আজও টিকে আছে। তবে
ইংল্যান্ডের বর্তমান সীমা আরো সামনে সরে
যাওয়াতে এই দেয়াল আধুনিক ইংল্যান্ডের মধ্যে
পড়েছে, ইংল্যান্ড-স্কটল্যান্ড সীমানায় নয়।
লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে এই দেয়ালের একটা
মিনিয়েচার রয়েছে যা গতবছর লন্ডন ভ্রমনের সময়
দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল।
এবার দৃষ্টি ফেরাচ্ছি ইংল্যান্ডের দিকে। রোমান
শাসনের কারণে বৃটেনের নিচের অংশে ব্যাপক
উন্নতি হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রোমানদের তৈরি
করা একটা নগর যার নাম “লন্ডন”। কালের ঘড়ি যখন
এগিয়ে চলছিল, তখন পঞ্চম শতকের দিকে রোমান-
জার্মান থেকে “এংলো-স্যাক্সোন” নামক একটা
গোষ্ঠী গ্রেট বৃটেন দ্বীপের নীচের অংশে এসে
বসবাস করতে শুরু করে। তাদের ভাষার নাম ছিল
“এ্যাংলিশ” যেখান থেকে বর্তমান ইংলিশ এসেছে
এবং তাদের নামানুসারে ঐ এলাকার নাম হয়
ইংল্যান্ড, তবে সেটা আরো অনেক পরে। ষষ্ঠ শতকে
কিং আর্থার তাদের পরাজিত করে
(রিকোম্যান্ডেড মুভি - কিং আর্থার) বৃটনদের পক্ষ
থেকে শাসন প্রতিষ্ঠা করে। আরো পরে ৭৪৭ সনের
দিকে কিং অব মার্সিয়া ওফ্ফা আংশিক ভাবে
কিং অব এ্যাংলেস হয়। তাকেই ইংল্যান্ডের প্রথম
রাজা হিসেবে ধরা হয়। তবে ১০৬৬ সনে ফ্রান্স
থেকে আসা নর্মানরা বর্তমান ইংল্যান্ড এলাকা
দখল করে নেয় এবং এর পর থেকেই মূলতঃ
শক্তিশালী রাজ্য হিসেবে ইতিহাসে ইংল্যান্ডের
পাদচারণা শুরু হয়। উল্লেখ্য যে নর্মান জাতি
এসেছে ফ্রান্স থেকে তবে তাদের আদি জাতি
“ভাইকিং” এসেছে স্ক্যান্ডেনেভিয়া থেকে।
এজন্যে ইংরেজী ভাষায় এই সব এলাকার শব্দের
কোন না কোন ভাবে প্রবেশ রয়েছে। তবে নর্মানরা
দখল করে নেয়ার পর থেকে ইংরেজী শব্দে রোমান
শব্দের প্রভাব কমতে শুরু করে এবং ফ্রেন্স শব্দ
বাড়তে থাকে ব্যাপক ভাবে।
যাইহোক, ইংল্যান্ড যখন গড়ে উঠছিল, তখন
স্কটল্যান্ড বসে ছিল না। ধীরেধীরে ঐক্যবদ্ধ হওয়া
স্কটরা ৮৪৩ সনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল “কিংডম অব
স্কটল্যান্ড”। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের পাশেই
বৃটেনের একটা কোনায় গড়ে উঠেছিল আরেকটি
রাজ্য। এই রাজ্যের নাম ওয়েলস (ষষ্ঠ শতকে কিং
আর্থারের রাজ্য মূলতঃ বর্তমান ওয়েলস এর
সীমানায় ছিল)। তবে ওয়েলসকে কিংডম বলা হতো
না বরং বলা হতো “প্রিন্সিপালিটি” এবং এর
শাসককে বলা হতো “প্রিন্স”। আর বৃটেনের পাশের
দ্বীপ আয়ারল্যান্ডে তখন অনেকগুলো রাজ্য ছোট
ছোট ভাগে বিভক্ত হয়ে শাসন করছিল। নর্মানরা
ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড – এই তিন
এলাকাকে দখল করার জন্য মরিয়া হয়ে ছিল যদিও
সেটা সফল করতে আরো দুইশ বছর অপেক্ষা করতে
হয়েছিল। ইংল্যান্ডের রাজা এ্যাডওয়ার্ড (যাকে
লংশ্যাংস বলা হতো) ছিল নিশ্ঠুরতম শক্তিশালী
রাজা। তার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল চারটা রাজ্যকে
এক করে একটা রাজ্য বানানোর। সেই উদ্দেশ্যে সে
একের পর এক আক্রমণ করে চলেছিল ওয়েলস,
আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড। প্রথম দুটোতে সফল
হলেও প্রায় দখল করে বসা স্কটল্যান্ডকে শেষ
পর্যন্ত ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল এ্যাডওয়ার্ড দুইজন
মহানায়কের কারণে - প্রথমে উইলিয়াম ওয়ালেস
এবং পরে রবার্ট ব্রুস দ্যা গ্রেট (রিকোম্যান্ডেড
মুভি - ব্রেভ হার্ট) বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে তার
থেকেও বড় বাঁধা হয়ে এসেছিল সম্ভবত মৃত্যু। তার
মৃত্যুর পর তার ছেলে দ্বিতীয় এ্যাডওয়ার্ড রবার্ট
ব্রুসের হাতে পরাজিত হয়ে স্কটল্যান্ড ছাড়তে বাধ্য
হয়। এই প্রসঙ্গে স্কটল্যান্ডের সবচেয়ে শক্তিশালী
রাজা রবার্ট ব্রুসের একটা মন্তব্য বেশ মজার। ব্রুস
একবার বলেছিল, “আমি জীবিত দ্বিতীয়
এ্যাডওয়ার্ডকে যতটা পরোয়া করি, তার থেকে
অনেক বেশী পরোয়া করি মৃত প্রথম এ্যাডওয়ার্ডকে”।
যাইহোক, স্কটল্যান্ড দখল করতে না পারলেও অন্য
দুটোতে ভালোই কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল
এ্যাডওয়ার্ড। সে ১২৭৭ সনের ১১ ডিসেম্বর ওয়েলস এর
প্রিন্সকে হত্যা করে ওয়েলস দখল করে নেয়। সেই
থেকে ওয়েলস ইংল্যান্ডের অংশ হিসেবে গণ্য
হচ্ছে। ওয়লেস দখলের পর এ্যাডওয়ার্ড তার ছেলেকে
“প্রিন্স অব ওয়েলস” ঘোষণা করে এবং সেই থেকে
আজও ইংল্যান্ডের রাজা/রানীর বড় ছেলের
টাইটেল প্রিন্স অব ওয়েলস। সরল ভাষায় বললে বলা
যায় এটা একটা লুণ্ঠিত টাইটেল। যাইহোক, ওয়লেস
দখলের পর প্রথম যে কাজটা ইংরেজরা করে সেটা
তাদের ভাষাকে “পুশ” করা যার ফলে ওয়েলসের
নিজের ভাষা “ওয়েলশ” ধীরেধীরে মৃত্যুবরণ করে।
গতবছর ওয়েলস দিয়ে যাবার সময় লক্ষ্য করি তারা
খুব গর্বের সাথে জানাচ্ছে তারা একটা
বাইলিঙ্গুয়াল দেশ। ২০০৫ সনে ওয়েলস এর রাষ্ট্রিয়
অস্তিত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর তাদের অন্যতম লক্ষ্য
হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের ভাষাকে বাঁচিয়ে তোলা।
উল্লেখ্য যে ওয়েলস-এর ইংলিশ ডাইলেক্টটা
ইংরেজী এবং ওয়লেশ ভাষার মিশ্রণে তৈরি। এতে
“গেয়ো”, “অশিক্ষিত” বা “নীচু” শ্রেনীর কোন ভেদ-
বিভেদ নেই।
এবার দৃষ্টি ঘোরাচ্ছি আয়ারল্যান্ডের দিকে।
এ্যাডওয়ার্ডের শাসনের প্রায় একশ বছর আগের
ঘটনা। ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় হেনরীর পাঁচ
ছেলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিল জন। মানুষ তাকে
একটা অদ্ভুত নামে ডাকতো – “জন দ্যা
ল্যাকল্যান্ড”। এই নামের কারণ ছিল বাবার
সবচেয়ে ছোট ছেলে হওয়াতে শাসন করার মত জনের
কোন এলাকা ছিল না। ঐ সময় হেনরী পাশের দ্বীপ
আয়ারল্যান্ড এর একটা ক্ষুদ্র এলাকা দখল করতে
সক্ষম হয় যার নাম “ডাবলিন”। ছেলেকে খুশি করার
জন্যে সেই এলাকায় লর্ডশিপ প্রতিষ্ঠা করে জনকে
প্রেরণ করা হয় আয়ারল্যান্ডের প্রথম লর্ড হিসেবে।
শাসক হিসেবে ইংল্যান্ডের রাজ বংশের এটাই
আয়ারল্যান্ডে প্রথম আগমন। এবার যে গল্পটা বলবো
সেটা আমি বেশ কয়েকবার আইরিশ বন্ধুদের থেকে
শুনেছি। জন যখন প্রথম ডাবলিনে আসে তখন তাকে
অভ্যর্থনা জানাতে আইরিশদের পক্ষ থেকে একটা
প্রতিনিধি দল এসেছিল। তাদের পোশাক দেখে জন
তাচ্ছিল্যের সাথে বলেছিল “এই সব ছোটলোক
কোথা থেকে এসেছে”। ফলে আইরিশরা ক্ষিপ্ত হয়ে
অভ্যর্থনা না দিয়েই চলে যায়। এই গল্পের একটা
তাৎপর্য আছে, সেটা হলো - আয়ারল্যান্ডে ইংরেজ
শাসনের প্রথম মুহূর্তেই তারা “এরিস্টোক্রেট” এবং
তথাকথিত নীচু স্তরে ভাগ করে ফেলেছিল এখানকার
মানুষকে। এরই রেশ ধরে পরবর্তীতে ক্ষমতায় থাকা
ইংরেজ এবং তাদের কাছের আইরিশরা নিজেদের
মনে করতো সম্ভ্রান্ত এবং সাধারণ আইরিশদের
মনে করতো নীচু স্তরের। ফলে আয়ারল্যান্ডে তৈরি
হয় দুটো মেরুর। সাধারণ আইরিশরা গেইলিক
উচ্চারণের সাথে মিলিয়ে ইংলিশ বলতে শুরু করে
কিন্তু যারা ইংরেজদের কাছের মানুষ ছিল, সেইসব
আইরিশরা নিজেদের ভাষাকে ছেড়ে পরিপূর্ণ
ইংরেজ হয়ে উঠার চেষ্টা করে। অবিশ্বাস্য হলেও
সত্য, আজ এক হাজার বছর পরও এই বিষয়টা
আয়ারল্যান্ডের একটা অংশে এখনও বিদ্যমান।
যথাসময়ে সেটা বলবো। যাইহোক, আয়ারল্যান্ডের
প্রথম লর্ড জনের ভাগ্য রাতারাতি বদলে যায় তার
বড় চার ভাইয়ের একের পর এক মৃত্যুতে। ফলে বাবার
পঞ্চম সন্তান হওয়ার পরও সে রাজত্ব পেয়ে যায়
এবং আয়ারল্যান্ড ছেড়ে ইংল্যান্ডে গিয়ে কিং অব
ইংল্যান্ড-এর দায়িত্ব ভার গ্রহণ করে। পরবর্তীতে
এই জন ইতিহাসে দারুণ বিখ্যাত (অথবা কুখ্যাত) হয়ে
উঠে যখন তার সাথে যুদ্ধ বাধে রবিন হুড-এর
(রিকোম্যান্ডেড মুভি - রবিন হুড)। তবে সে গল্প
আমাদের অলোচ্য বিষয়বস্তু নয়। ফলে জনের ইতিহাস
এখানেই শেষ করছি।
পরবর্তী একশ বছর ইংরেজ আগ্রাসন চলে
আয়ারল্যান্ডের ভাষার উপর দিয়ে। যখন প্রথম
এ্যাডওয়ার্ড ক্ষমতায় আসে (যার গল্প জনের আগে
বলছিলাম) ততদিনে আইরিশ ভূমিতে ইংরেজরা
বেশ ভালো ঘাঁটি বেঁধে ফেলেছে। এ্যাডওয়ার্ড
সেটাকে আরো উস্কে দেয়। ওয়েলস-এর টুরিজমের
ওয়েব সাইটে পড়েছিলাম, এই সময়টায় ওয়েলস এবং
আয়ারল্যান্ড থেকে বিলুপ্ত হতে শুরু করে তাদের
নিজেদের ভাষা। আর গড়ে উঠতে শুরু করে
হাইবার্নো ইংলিশ। ইংরেজীর এই ডাইল্যাক্টটার
বিশেষত্ব হচ্ছে, এটা গেইলিক উচ্চারণে ইংরেজী
বলে। এই ডাইল্যাক্টের “হাইপারকারেশন”-এর
প্রভাবে এ্যাংলো ইরেজীর বেশ কিছু “নিশ্চুপ
অক্ষর” উচ্চারিত হতে শুরু করে। এর মধ্যে অন্যতম
“আর” এবং “হেইচ”। ইংরেজরা যেখানে R কে
উচ্চারণই করে না (নন-রোটিক এ্যাকসেন্ট) সেখানে
আইরিশ, স্কট এবং ওয়েলশরা (কেলটিক জাতিগুলো)
এটাকে গভীর ভাবে উচ্চারণ করে (রটিক
এ্যাকসেন্ট)। যেমন, ইংল্যান্ডে বলে, “ইউ আ‘ মাই
বা‘দা‘”। আয়ারল্যান্ডে বলে, “ইউ আ‘ঢ় মাই
ব্রাদা‘ঢ়”। এই প্রমিনেন্ট R এর উচ্চারণ এখন ব্রিটিশ
এবং এ্যামেরিকান ইংরেজীর অন্যতম প্রভেদ
সৃষ্টিকারি মানদণ্ড (কীভাবে সেটা হলো, সেটা
আরো পরে ব্যাখ্যা করবো)। এরই মত H-এর উচ্চারণও
সাধারণ আইরিশরা করতে শুরু করে “হেইচ” কেননা
গেইলিকে উচ্চারণটা এমন।
কেটে যেতে থাকে সময়। ষোড়ষ শতকের ঘটনা।
“পার্সোনাল ইউনিয়ান”-এর মাধ্যমে আয়ারল্যান্ড
তখন পুরোপুরি ইংরেজ রাজার দখলে। ১৫৮৩ সনে
স্যার গিলবার্ট আয়ারল্যান্ড থেকে যাত্রা শুরু করে
আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে নিউফাওন্ডল্যান্ডে গিয়ে
পৌঁছান এবং সেই এলাকাকে ইংল্যান্ডের কলোনি
হিসেবে ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য যে নর্থ
আমেরিকায় এটাই প্রথম ইংরেজ কলোনি। এরপর
স্রোতের মত আইরিশরা মাইগ্রেন্ট হতে শুরু করে
নর্থ আমেরিকায়, সাথে নিয়ে যেতে থাকে তাদের
ভাষা। ১৮৪৫ সনে আয়ারল্যান্ডে আলুতে এক বিশেষ
ধরণের ফাঙ্গাস দেখা দেয় যার কারণে আলুর
উৎপাদনে ব্যাপক ধস নামে। যেহেতু আয়ারল্যান্ডে
আলু প্রধান খাদ্য, ফলে এর রেশ ধরে দেখা দেয়
প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষ – যা ইতিহাসে “গ্রেট পটাটো
ফেমিন” নামে পরিচিত। এই সময় আয়ারল্যান্ডের
অর্ধেকেরও বেশী মানুষ (কিছুকিছু এলাকার ৮৫
শতাংশ মানুষ) এ্যামেরিকা, ক্যানাডা এবং
অস্ট্রেলিয়াতে চলে যায়। এই মাইগ্রেশন
এ্যামেরিকার ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা এই
মানুষগুলোই পরবর্তীতে এ্যামেরিকাকে নূতন ভাবে
গড়ে তুলেছিল (রিকোম্যান্ডেড মুভি - গ্যাঙ্স অব
নিউ ইয়র্ক)। এই মাইগ্রেশনের ফলে এ্যামেরিকায়
“রটিক এ্যাকসেন্ট” আরো ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে
পড়ে।
এবার বিংশ শতকের আয়ারল্যান্ডের দিকে
তাকাচ্ছি। এখানে তখন টানটান উত্তেজনা দুটো
শ্রেণীর মধ্যে। একটা দল ক্যাথলিক যারা আইরিশ
জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। আরেকদল
প্রোটেস্টট্যান্ট যারা নিজেদের এ্যাংলো-আইরিশ
ভাবতে পছন্দ করতো। প্রোটেস্টট্যান্টদের মূল ঘাঁটি
ছিল নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড যেখানে ক্যাথলিকরা
ছিল নির্যাতিত, বঞ্চিত এবং গরীব
(রিক্যোমেন্ডেড মুভি - ফিফটি ডেড মেন
ওয়াকিং)। অন্যদিকে প্রোটেস্টট্যান্টরা ছিল
ক্ষমতাধর এবং তথাকথিত উঁচু বর্গের। তারা গেইলিক
ভাষায় কথা প্রায় বলতোই না। নর্দার্ন
আয়ারল্যান্ড সহ আয়ারল্যান্ড-এর প্রায় সব স্থানেই
ক্যাথলিক স্কুলগুলোতে বাচ্চাদের শেখানো হতো
“হেইচ” কিন্তু প্রোটেস্টট্যান্ট স্কুলগুলোতে
শেখানো হতো “এইচ”। প্রোটেস্টট্যান্টরা প্রচার
করতো “হেইচ” বলে নীচু প্রকৃতির স্বল্প শিক্ষিত
মানুষরা আর “এইচ” বলে এরিস্টোক্রেটরা।
পরবর্তীতে ১৯২২ সনে আয়ারল্যান্ড স্বাধীন হলে
৩২টা কাউন্টির মধ্যে ৬টা নিয়ে তারা নর্দার্ন
আয়ারল্যান্ড হিসেবে পুনরায় ইংল্যান্ডের সাথে
যোগ দেয় এবং বাকি ২৬টা কাউন্টি প্রথমে আইরিশ
ফ্রি স্টেট এবং পরে রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড
হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
বর্তমানে রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড-এ স্কুল,
কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় – সব স্থানে “হেইচ” ব্যবহার
করা হয়। এখানে কেউ “এইচ” উচ্চারণ করে না বা
আমরা যদি করি তাহলে তারা ঠিক মত বোঝেও না।
দুটো গল্প বলছি এই প্রসঙ্গে। আমি প্রথম যখন দেশে
টাকা পাঠানোর জন্যে পোস্ট অফিসে যাই, তখন
তারা আমার নামের বানান জিজ্ঞেস করেছিল।
আমি বলেছিলাম, “সি এইচ ও ডব্লিউ…”। যে লোকটা
কাউন্টারে ছিল, সে প্রথমবার বোঝে নি আমি কী
বললাম। ফলে আমি আবার রিপিট করি। কিন্তু
লোকটা এবারও বোঝে না। আমি তৃতীয়বার বলার পর
সে হেসে বললো, “ওহ! হেইচ?”। আরেকটা গল্প
আমাদের ট্রিনিটিরই আরেক বাংলাদেশী ছাত্র
ধ্রুবকে নিয়ে। সে গিয়েছে প্রিন্টার কিনতে।
দোকানে গিয়ে বলেছে, “এইচ পি” দিতে।
সেলসম্যান বোঝে না। বেশ কয়েকবার বলার পর ধ্রুব
যখন “হেইচ পি” বলে তখন সে বুঝেছে। আমার
কাজিনের বন্ধু শিবলী ভাইয়া লন্ডনে থাকেন।
সেখাতে তার একটা অভিজ্ঞতা আছে এ বিষয়ে।
HSBC ব্যাঙ্কে গিয়ে শোনে তারা “হেইচ এস বি
সি” বলে! গতবছর ইংল্যান্ড গিয়ে আমি নিজেও
দেখেছিলাম ওখানেও এখন অনেকেই হেইচ বলে।
আমাদের রিসার্চ রুমে আমরা সব সময় “হেইচ টি এম
এল”, “হেইচ টি টি পি” ইত্যাদি বলি। মাঝে মাঝে
হেইচটা অল্প উচ্চারণ করা হয় যখন সংক্ষেপণের
মাঝে থাকে - যেমন পি.হেইচ.ডি বলা হলে অনেক
সময় “পি.এইচ.ডি”-ও শোনায়। ২০০৭ সন থেকে আমার
মধ্যে এই বিষয়টা এমন ভাবে ছড়িয়েছে যে আমি
চাইলেও এখন আর “এইচ” উচ্চারণ করতে পারি না
কথার মধ্যে। কাল হঠাৎ করে মনে হলো “এইচ পি”
শব্দটা যেন আমি জীবনও শুনি নি, এতটাই অচেনা
লাগছিল। আসলে এটা গ্রহণ করা বা বর্জন করার
বিষয় নয়। এটা পরিবেশে থাকলে আপনাআপনি ঢুকে
যাবে। হয়তো আয়ারল্যান্ড ছেড়ে অন্য দেশে গেলো
আবার আমি “এইচ”-কে স্বাভাবিক ভাবে নিতে
পারবো।
এবার স্ট্যান্ডার্ড-এর বিষয়ে আবার একটু ফিরে
আসি। আমাদের মনে রাখতে হবে ভাষা মানুষের মুখ
থেকে ভাষাবিদের টেবিলে যায়, ভাষাবিদের
টেবিল থেকে মানুষের মুখে আসে না। আজ আমরা
যে বাংলা ভাষায় কথা বলছি এটা কিন্তু নদীয়ার
ডাইলেক্ট। রবি ঠাকুর প্রথম দিকে এর ব্যাপক
বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু আজ এটাই
স্ট্যান্ডার্ড কারণ সবচেয়ে বেশী মানুষ এই
ডাইলেক্টে কথা বলে। আজ যদি নোয়াখালির
ভাষায় সবাই কথা বলতো তাহলে সেটাই
স্ট্যান্ডার্ড হতো! একেকটা ডাইলেক্ট ধীরেধীরে
স্ট্যান্ডার্ড হয়। আজ এ্যামেরিকান ডাইলেক্টকেও
স্ট্যান্ডার্ড বলা হয়। অথচ প্রায় চার শ বছর আগে
তারাই ছিল “নীচু” এবং
“অশিক্ষিত” (রিকোম্যান্ডেড মুভি - দ্যা
পেট্রিয়ট)। উইকিপিডিয়াতে “হেইচ” আর্টিকেলটা
আমি গত দুই বছর ফলো করছি। ওখানে না না বিতর্ক
হচ্ছে। আর এই বিতর্কের মাধ্যমে যে জিনিসটা
বুঝতে পেরেছি সেটা হলো “হেইচ” এখন ছড়িয়ে
পড়েছে সারা পৃথিবীতে, আর সেজন্যেই এত বিতর্ক।
সেই আর্টিকেলে স্ট্যান্ডার্ড ইংরেজির পক্ষে যে
রেফারেন্সটা দেয়া হয়েছে সেটা অক্সফোর্ড
ডিকশনারি থেকে নেয়া। ফলে সেখানে ব্যাখাটা
কেমন হবে সহজেই বোধগম্য। এই লিঙ্কটা আরেকটা
ডিকশনারি থেকে নেয়া। এখানে “হেইচ” এর
ব্যাখ্যাটা দেখলে অনেক কিছু পরিষ্কার হবে
আমাদের কাছে।
আমার ছোট বোনের স্যার যে “খাঁটি” আইরিশ-এর
সাথে কথা বলেছিলেন, সেই আইরিশ প্রফেসার কি
ক্যাথলিক ছিলেন নাকি প্রোটেস্টট্যান্ট? এটা
একটা প্রশ্ন বটে। আমি ৯৯ শতাংশ নিশ্চিত তিনি
প্রোটেস্টট্যান্ট ছিলেন। আর সেজন্যই তার
ব্যাখ্যাটা অমন ছিল।
সব শেষে একটাই কথা বলবো, আজ যদি কেলটিক
জাতিগুলো অর্থাৎ আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড বা
ওয়েলস -এর কথা বলি, তাহলে “হেইচ”-ই এখানে
স্ট্যান্ডার্ড। “এইচ” এখানে অব্যবহৃত ডাইলেক্ট!
No comments:
Post a Comment