রহস্যময় বইঃ কোডেক্স গিগাস বা শয়তানের বাইবেল
পৃথিবীর সব থেকে বড় বই মানে আকার
আকৃতিতে কোনটা জানেন নাকি? এটি কোডেক্স গিগাস
(Codex Gigas) নামে পরিচিত অন্য কথায় একে “শয়তানের
বাইবেল” বলা হয়। বলা হয়ে থাকে দুনিয়ার সব থেকে বড়
রহস্যময় হাতে লেখা বই এই কোডেক্স গিগাস
১৬৫ পাউন্ড ওজনের শয়তানের বাইবেলের
যা কমপক্ষে ১৬০টি গাধা বা খচ্চড়ের চামড়ার ওপর লিখিত।
বইটিতে ৬০০ পৃষ্টা আছে। আর তিন ফুট লম্বা। কমপক্ষে ২
জন মানুষ লাগে এই বই কে স্থানান্তারিত করতে।
ধারনা করা হারম্যান রিকুলাস নামক চেকোশ্লাভাকিয়ার
এক ফাদার এই কোডেক্স গিগাস লিখছে। এই ফাদার এক
খ্রীষ্টান মঠে অন্য সাধুদের সাথে পরমপিতার নাম গান
গেয়ে জীবন কাটাচ্ছিল কিন্তু এক দূর্বল
মুহুর্তে সে মঠের নিয়ম ভঙ্গ করে বসে।
সাথে সাথে ধরা পরে। এর পর তাকে কঠিন শাস্তি দেয়া হয়।
শাস্তি হল একটা খুপরির মাঝে তাকে আজীবন নিঃসঙ্গ
জীবন কাটাতে হবে।
হারম্যান মেনে নেয় এই শাস্তি। এক
পর্যায়ে সে মঠাধক্ষ্য কে তার পাপের শাস্তি লাগবের
জন্য প্রস্তাব দেয় সে এক রাতের মধ্যে তার অর্জিত
জ্ঞান যা আছে মানুষের কল্যানে তা নিয়ে সে একটা বই
লিখবে। যে বইতে সৃষ্টিকর্তা আর মঠের গুনগান
থাকবে থাকবে মানুষের বিভিন্ন উপকার কিভাবে হয়
সেব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য। মঠাধক্ষ্য হারম্যান এর
আর্জি কবুল করে।
হারম্যান কে দেয়া হয় প্রয়োজনীয় লেখার উপকরন
মানে খচ্চরের চামড়া আর কালি। এক সন্ধ্যায়। খচ্চরের
চামড়া আর কালি নিয়ে লিখতে বসে হারম্যান। মাঝ রাত
আবধি এসে দেখতে পায় মাত্র অর্ধেক
পাতা লিখতে পেরেছে। হতাশায় হারম্যান শয়তান
কে একটা চিঠি লিখে বসে ওই মাঝ রাতে নিজের রক্ত
দিয়ে তাতে সে শয়তানের সাহায্য কামনা করে,
সে লেখে শয়তান যদি তাকে এই বই লিখে দেয় তবে তার
আত্মা সে শয়তান কে দিয়ে দেবে। সাড়া দেয় শয়তান।
স শরীরে দেখা দেয় শয়তান। শুরু হয় কোডেক্স গিগাস
লেখা। মাঝ রাত থেকে উষার আগেই লেখা শেষ হয়ে যায় এই
বিশাল বই। নিজেকে প্রমান দেবার জন্য নিজ হাতে শয়তান
তার ছবি একে রেখে যায় কোডেক্স গিগাসে। এই হল
কোডেক্স গিগাসের মিথ।
কোডেক্স গিগাসে স্রষ্টার বিপক্ষতার
পাশাপাশি বিভিন্ন ডাক্তারির
বর্ননা দেয়া আছে কিভাবে কালাজ্বর, মৃগী রোগ
ভালো হবে সে ব্যাপারে লেখা আছে আরো এর
পাশাপাশি কিভাবে চোর
ধরতে হবে ডাইনি কিভাবে চেনা যাবে সে সবও লেখা আছে।
কোডেক্স গিগাস নিয়ে প্রচুর গবেষনা চলছে।
তবে এটা নিশ্চিত করা হয়েছে এই কোডেক্স গিগাস এক জন
মানুষের হাতে লেখা। যা আধুনিক হ্যান্ড
রাইটিং এক্সপার্টরা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমান
করেছে। তবে এর লেখার ব্যাপ্তি কাল নিয়ে মতভেদ আছে,
কেউ কেউ বলেন এটা লিখতে ৫ বছর লাগছে আবার কেউ কেউ
বলেন এটা লিখতে ২৫-৩০ বছর লাগছে। সময় যত ই লাগুক
এটা একজনের হাতে লিখিত এ নিয়ে কোন সন্দেহ নাই। সেই
একজন কি হারম্যান না কি শয়তান নিজে সেটা এখনো কেউ
জানে না।
বইর হিসাব অনুযায়ী এই বই ১২২৯ সালের শেষের কোন এক
রাতে এটা লেখা শেষ হয়। কোডেক্স গিগাস যে মঠে লিখিত
হয়েছিল সে মঠ “হুসাইত বিদ্রোহ” র যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যায়
১৫ শতকে। এর পর এই বই ১৪৭৭-১৫৯৩ পর্যন্ত ব্রোমভ
মনাষ্টরিতে ছিল। এরপর প্যারাগুয়ের রাজা রুডলফ দ্বিতীয়
এই বইটার সংগ্রহশালায় নিয়ে যান ১৬৯৪ সালে।
প্যারাগুয়ের সাথে ত্রিশ বছরের যুদ্ধ
শেষে বিজয়ী সুইডিশ আর্মি এই বই লুঠ করে ১৬৪৮
সাথে ষ্টকহোমে সুইডিশ রয়াল লাইব্রেরীতে নিয়ে যায়।
৭ ই মে ১৬৯৭ সালে এক মারত্মক আগুন লাগে সুইডেনের
রাজার প্রসাদে যেখানের লাইব্রেরীতে এই বই রক্ষিত
ছিল। আগুনে বইটির পুরা পুড়ে যাবার আগেই
জানালা দিয়ে এটাকে উদ্ধার
কর্মীরা নীচে ফেলে দিতে সমর্থ হয়। কিন্তু
ক্ষতি ততক্ষনে অনেক হয়ে গেছে। কিছু পাতা পুড়ে গেছে।
কিছু পাতা নীচে পড়ার সময় বতাসে উড়ে যায়। এই
পৃষ্টাগুলো এখনো পাওয়া যায় নাই।
৩৫৯ বছর পর এই কোডেক্স গিগাস সুইডেন থেকে আবার
প্যারাগুয়ে আনা হয় এক বছরের চুক্তিতে প্রদর্শনীর জন্য
২০০৭ সালে। পরে ২০০৮ সালে আবার সুইডেন কর্তৃপক্ষ আবার
তাদের বই ফিরিয়ে নেয়.
কোডেক্স গিগাস কি আসলেই শয়তানের লিখিত না মানুষের
লিখিত সেটা নিয়ে বিতর্ক আছে কিন্তু এটা যে একজনের
হাতে লিখিত এনিয়ে কোন সন্দেহ নাই।
বইটি এখন সুইডেন রয়াল মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে।