Monday, 2 November 2015

চারকোল (পাটজাত পণ্য) বাংলাদেশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার

বাংলাদেশের সোনালি আঁশখ্যাত পাট হারিয়েছে তার গৌরব। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে পাটজাত অনেক দ্রব্যের চাহিদা বাড়ছে এখনো। পণ্যগুলোর রফতানি বাজার ধরতে পারলে পাটের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার সম্ভব। এ রকমই একটি সম্ভাবনাময় পণ্য পাটখড়ি পুড়িয়ে তৈরি কয়লা বা চারকোল। জানা গেছে, পণ্যটি রফতানির মাধ্যমে বার্ষিক রফতানি আয় বাড়ানো সম্ভব আড়াই হাজার কোটি টাকা। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্ভাবনাময় এ পণ্যটির বিকাশে সরকারও এগিয়ে আসছে।

জানা গেছে, দেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চারকোল উত্পাদন শুরু হয় ২০১২ সালে। ওই বছরই চীনে প্রথম চালান পাঠানোর মাধ্যমে রফতানিমুখী পণ্য হিসেবে অভিষেক ঘটে দেশে উত্পাদিত চারকোলের। বর্তমানে পণ্যটির চাহিদা রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। দেশে বাণিজ্যিকভাবে পণ্যটির উত্পাদন বাড়লে আগামীতে জাপান,ব্রাজিল, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চারকোল রফতানি সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখ টন পাটকাঠি উত্পাদিত হয়। এর মধ্যে ৫০ শতাংশের সঠিকভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে চারকোলের বার্ষিক উত্পাদন দাঁড়াতে পারে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টনে, যা বিদেশে রফতানির মাধ্যমে বার্ষিক বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ানো সম্ভব প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে সারা দেশে বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগ।বিশ্বব্যাপী চারকোলের ব্যবহার বহুমুখী। ফেসওয়াশ,ফটোকপিয়ারের কালি, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধসহ আরো বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে ব্যবহূত হয় চারকোল।
বাংলাদেশে বর্তমানে চারকোল উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০-১২টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সানবিম কর্পোরেশন, মাহফুজা অ্যান্ড আহান এন্টারপ্রাইজ,জামালপুর চারকোল লিমিটেড ও রিগারো প্রাইভেট লিমিটেড। এছাড়াও অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে চারকোলের উত্পাদন শুরু হয়েছে জামালপুর,নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, রাজবাড়ী,ফরিদপুর, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
সানবিম কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল এর বলেন, ‘চারকোল উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে দেশে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।তবে এ সম্ভাবনা বাস্তবায়ন করতে হলে উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। পাটজাত পণ্য উত্পাদক হিসেবে গত এক বছর ধরে আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে পাট মন্ত্রণালয় থেকে সহায়তার আশ্বাসও পেয়েছি আমরা। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী,চারকোল উত্পাদন খাতে সরকারি সহযোগিতা হিসেবে প্রস্তাবিত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে একে একটি উদীয়মান শিল্প হিসাবে ঘোষণা, উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত বা সহযোগী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের সুযোগ সৃষ্টি, শিল্পটির জন্য দ্রুত পৃথক নীতিমালা তৈরি এবং সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
চারকোল উত্পাদনকারীদের মতে, নতুন বলেই খাতটিকে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এর মধ্যে কাঁচামালের সরবরাহ সংকটের পাশাপাশি রয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে পাটকাঠির মূল্যবৃদ্ধি। এসব সমস্যা মোকাবেলার জন্য পাট মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, গত ২৮ ও ২৯ অক্টোবর বিষয়গুলো নিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হয়। সভায় উত্পাদনকারীদের সমস্যাগুলো দূর করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নির্দেশনা দেয়া হয়। জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে খুব শিগগিরই একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম জানান, চারকোল বাংলাদেশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এতে পাট উত্পাদনে আবারো আগ্রহী হবেন কৃষকরা। এভাবেই ফিরিয়ে আনা হবে সোনালি আঁশের হারানো ঐতিহ্য।

No comments:

Monday, 2 November 2015

চারকোল (পাটজাত পণ্য) বাংলাদেশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার

বাংলাদেশের সোনালি আঁশখ্যাত পাট হারিয়েছে তার গৌরব। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে পাটজাত অনেক দ্রব্যের চাহিদা বাড়ছে এখনো। পণ্যগুলোর রফতানি বাজার ধরতে পারলে পাটের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার সম্ভব। এ রকমই একটি সম্ভাবনাময় পণ্য পাটখড়ি পুড়িয়ে তৈরি কয়লা বা চারকোল। জানা গেছে, পণ্যটি রফতানির মাধ্যমে বার্ষিক রফতানি আয় বাড়ানো সম্ভব আড়াই হাজার কোটি টাকা। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্ভাবনাময় এ পণ্যটির বিকাশে সরকারও এগিয়ে আসছে।

জানা গেছে, দেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চারকোল উত্পাদন শুরু হয় ২০১২ সালে। ওই বছরই চীনে প্রথম চালান পাঠানোর মাধ্যমে রফতানিমুখী পণ্য হিসেবে অভিষেক ঘটে দেশে উত্পাদিত চারকোলের। বর্তমানে পণ্যটির চাহিদা রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। দেশে বাণিজ্যিকভাবে পণ্যটির উত্পাদন বাড়লে আগামীতে জাপান,ব্রাজিল, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চারকোল রফতানি সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখ টন পাটকাঠি উত্পাদিত হয়। এর মধ্যে ৫০ শতাংশের সঠিকভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে চারকোলের বার্ষিক উত্পাদন দাঁড়াতে পারে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টনে, যা বিদেশে রফতানির মাধ্যমে বার্ষিক বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ানো সম্ভব প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে সারা দেশে বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগ।বিশ্বব্যাপী চারকোলের ব্যবহার বহুমুখী। ফেসওয়াশ,ফটোকপিয়ারের কালি, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধসহ আরো বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে ব্যবহূত হয় চারকোল।
বাংলাদেশে বর্তমানে চারকোল উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০-১২টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সানবিম কর্পোরেশন, মাহফুজা অ্যান্ড আহান এন্টারপ্রাইজ,জামালপুর চারকোল লিমিটেড ও রিগারো প্রাইভেট লিমিটেড। এছাড়াও অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে চারকোলের উত্পাদন শুরু হয়েছে জামালপুর,নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, রাজবাড়ী,ফরিদপুর, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
সানবিম কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল এর বলেন, ‘চারকোল উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে দেশে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।তবে এ সম্ভাবনা বাস্তবায়ন করতে হলে উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। পাটজাত পণ্য উত্পাদক হিসেবে গত এক বছর ধরে আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে পাট মন্ত্রণালয় থেকে সহায়তার আশ্বাসও পেয়েছি আমরা। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী,চারকোল উত্পাদন খাতে সরকারি সহযোগিতা হিসেবে প্রস্তাবিত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে একে একটি উদীয়মান শিল্প হিসাবে ঘোষণা, উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত বা সহযোগী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের সুযোগ সৃষ্টি, শিল্পটির জন্য দ্রুত পৃথক নীতিমালা তৈরি এবং সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
চারকোল উত্পাদনকারীদের মতে, নতুন বলেই খাতটিকে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এর মধ্যে কাঁচামালের সরবরাহ সংকটের পাশাপাশি রয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে পাটকাঠির মূল্যবৃদ্ধি। এসব সমস্যা মোকাবেলার জন্য পাট মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, গত ২৮ ও ২৯ অক্টোবর বিষয়গুলো নিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হয়। সভায় উত্পাদনকারীদের সমস্যাগুলো দূর করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নির্দেশনা দেয়া হয়। জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে খুব শিগগিরই একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম জানান, চারকোল বাংলাদেশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এতে পাট উত্পাদনে আবারো আগ্রহী হবেন কৃষকরা। এভাবেই ফিরিয়ে আনা হবে সোনালি আঁশের হারানো ঐতিহ্য।

No comments: